আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

আজ বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয়,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ সম্পর্কে আমরা আজ বিস্তারিত জানব এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদন, রচনা, রচনা প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা, কবিতা, সংবাদ প্রতিবেদন, সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো

অনুষ্ঠানের সভাপতি, সহকর্মীবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, সকলকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

আসসালামু আলাইকুম

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি  (আমি….) আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে রক্তে রাঙানো একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন হলো এই একুশে ফেব্রুয়ারি, আজ জাতিসংঘ 193 টি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে, বাঙালি হিসেবে গর্ভের, আজ এই সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ

একুশ আমাদের মুক্তি ও প্রাপ্তির চেতনা হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের মহান একুশ আজ স্বদেশের আঙিনা পেরিয়ে বৈশ্বিক চেতনায় পরিণত হয়েছে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশের পরবর্তী আন্দোলনের বীজতলা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে তাই একুশ আমাদের আগামি দিনের এগিয়ে চলার প্রেরণা। একুশের চেতনা দেশের উন্নয়নের বুনিয়াদি সৃষ্টি করেছে এবং বৈশ্বিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বাঙালি হয়ে উঠেছে বিশ্বের দরবারে অনন্য।

আমি আজ আমার বক্তৃতায় বলতে চাই বাঙালি হিসেবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভালো কিছুর ধারণা দেওয়ার জন্য, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে তার মধ্যে

  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে স্বীকৃতি পায় সে সম্পর্কে বলতে চাই
  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রচনা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে
  • ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলা কত তারিখ এ সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে
  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদন রচনা এর আয়োজন করতে হবে
  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতার আয়োজন করতে হবে
  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে হবে
  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ এর আয়োজনে, সম্মানিত উপস্থিতি

১৯৯৯সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃত এবং ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এখন থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে

বিশ্বে এখন 193 টি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় এটি আমাদের জন্য গর্বের এবং গৌরবের স্বীকৃতি আমাদের বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে একটি উচ্চ তাপমাত্রায়

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

 

মহান একুশের এই দিনে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন ভাষা শহীদ রফিক শফিক জব্বার বরকত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভাষা শহীদ রফিক এক স্বাক্ষর রেখেছিলেন এ বাঙালি জাতির জন্য তিনি জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি প্রতিটি মুহূর্তে আমাদেরকে ভাষার জন্য জীবন দিতে হয় এই শিক্ষা ও তিনি দিয়েছেন আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও ভাষা শহীদ রফিককে নিয়ে গর্ববোধ করে

ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশের হাত ধরে। ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিশ একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিল ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা-না উর্দু ?’

এই পুস্তিকার লেখক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমেদ এবং অধ্যাপক আবুল কাশেম বাংলা ভাষাকে ভাববিনিময়, অফিস আদালতের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো দাবি তুলে ধরেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

গণপরিষদে পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন। পাকিস্তান গণপরিষদে তার প্রস্তাব আগ্রাহ্য হলে পূর্ব বাংলায় শুরু হয় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।

এর পরম্পরায় ২৭ ফেব্রুয়ারি এক সভায় গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। সভায় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার সারা দেশে হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ১১ মার্চ তারিখটি রাষ্ট্রভাষা দিবসরূপে পালিত হয়।

২১ মার্চ ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স ময়দানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক নাগরিক সংবর্ধনায় ঘোষণা করেন যে ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছাত্রনেতারা ও জনতা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ‘Students Role in nation building’ শিরোনামে একটি ভাষণ প্রদানকালে ক্যাটাগেরিক্যালি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একটি এবং সেটি উর্দু, একমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের মুসলিম পরিচয় তুলে ধরে।

’ জিন্নাহর এই বক্তব্য সমাবর্তনস্থলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং ছাত্ররা দাড়িয়ে ‘‘নো নো’’ বলে প্রতিবাদ করে। জিন্নাহর এই বাংলাবিরোধী স্পষ্ট অবস্থানের ফলে পূর্বে পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলন আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ এর আয়োজনে, সম্মানিত উপস্থিতি

ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হয় ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীনের ভাষণের মাধ্যমে। এদিন পল্টন ময়দানের এক জনসভায় জিন্নাহর কথাই পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। নাজিমুদ্দীনের বক্তৃতার প্রতিবাদে সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্র-নেত্রীরা আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্দান্ত নেয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে বর্ধমান হাউসের দিকে অগ্রসর হয়।

পরদিন ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে ৪০ সদস্যের ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়’। এই পরিষদ তার সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি হরতালের, সমাবেশ ও মিছিলের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০ ফেরুয়ারি সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় এক মাসের জন্য সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিভিন্ন হলে সভা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের বাংলা ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতামতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ   এর আয়োজনে, সম্মানিত উপস্থিতি

 

বেলা ২টার দিকে আবদুল মতিন এবং গাজীউল হকসহ অন্যান্য নেতারা দাবি আদায়ে অনড় থাকে। ছাত্ররা ছোট ছোট দলে মিছিল নিয়ে ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্য করে।

এমনকি ছাত্রীরাও এ আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। পুলিশ বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসরমাণ মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালায়।

গুলিতে আব্দুল জব্বার রফিক উদ্দিন আহমেদ ও আবুল বরকত নিহত হয়। বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। উপায়ন্তর না দেখে ২২ ফেব্রুয়ারি নুরুল আমিন সরকার তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদ বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলা ভাষাকে সত্যিকার অর্থে বিশ্বায়নের পূর্ণরূপ দেয়ার জন্য জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার এই উদ্যোগের প্রথম বাস্তবায়ন হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। জাতিসংঘে কার্যক্রম পরিচালিত হয় পাঁচটি ভাষায়।

সব দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তথা জাতিসংঙ্গের নিযুক্ত প্রতিনিধিরা উক্ত পাঁচটি ভাষার যেকোনো একটি ভাষায় ভাষণ দেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলায় ভাষণদান করার ফলে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলা ভাষার মহত্ব।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ   এর আয়োজনে, সম্মানিত উপস্থিতি

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি বিশ্বদরবারে এনে দিয়েছে এক বিশাল খ্যাতি। এ দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ বলেছেন-
আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত, আমাকে
স্বীকৃতি দিয়েছে,

আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানতে পারব
বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে ,
সত্যি গর্বিত আমি।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে অমর একুশের উদযাপন নিঃসন্দেহে এক বিশাল জাতীয় গৌরব ও সম্মানের। ২০০০ সাল থেকে UNESCO এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

২০০১ সালের ১৫ মার্চ বিশ্বের সব মাতৃভাষার গবেষণা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কাজ করার উদ্যোগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঢাকার সেগুনবাগিচায়।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভাষাসংক্রান্ত গবেষণা,ভাষা সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এটি ভাষার ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে যা বাংলা ভাষাকে বিশ্বমর্যাদায় আসীন করতে ভূমিকা রাখছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

 

২০১০ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ৪র্থ কমিটিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

ফলে এটি বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিক চর্চা বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে। মাতৃভাষার সংখ্যার বিচারে বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি শক্তিশালী ভাষা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

রাষ্ট্রীয় পর্যায় বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী দেশের সংখ্যা মূলত একটি-বাংলাদেশ। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এর বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা প্রদেশ, আসাম প্রদেশের বরাক উপত্যকার অন্যতম প্রশাসনিক ভাষা বাংলা, ফলে ভারতের ক্ষেত্রে বাংলা একটি প্রদেশিক ভাষা

ভারত উপমহাদেশের বাইরে একমাত্র আফ্রিকার সিয়েরালিওনে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংসদ বাংলাকে স্বীকৃতির বিল পাস করে। ফলে বাংলা ভাষা লাভ করে এক অনন্য মর্যাদা।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ   এর আয়োজনে, সম্মানিত উপস্থিতি

 

এই মুহূর্তে বহির্বিশ্বে ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বাংলা বিভাগ, সেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার অবাঙালি পড়ুয়া বাংলাভাষা শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করছে। এছাড়া চীনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলির ৩৩ খণ্ডের অনুবাদ এবং লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে বহির্বিশ্বে ভারত ও বাংলাদেশের পর ব্রিটেন ও আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়ে থাকে।
এর বাইরে চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষার সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। আমেরিকায় কমপক্ষে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও এশীয় গবেষণা কেন্দ্রে বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে। এর মধ্যে নিউইর্য়ক,শিকাগো,ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বের ছয়টি দেশের রাষ্ট্রীয় বেতারে বাংলা ভাষার আলাদা চ্যানেল রয়েছে। আরও ১০টি দেশের রেডিওতে বাংলা ভাষার আলাদা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। ব্রিটেনে ছয়টি ও আমেরিকায় ১০টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন ও বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে।

বিট্রেনে ১২টি বাংলা সাপ্তাহিক প্রত্রিকা বের হয়। ‘বেতার বাংলা’ নামে সেখানে একটি বাংলা রেডিও স্টেশন রয়েছে। ইউরোপের ইতালিতে বর্তমানে পাঁচটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা এবং রোম ও ভেনিশ শহর থেকে তিনটি রেডিও স্টেশন পরিচালিত হচ্ছে। ইতালি থেকে ছয়টি অনলাইন টেলিভিশন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে শতাধিক ফেসবুক টেলিভিশন চালু রয়েছে।

এছাড়া ডেনমার্ক সুইডেনসহ ইউরোপের আটটি দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ থেকে বাংলা ভাষার মূদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হয় সারা পৃথিবীতে একুশে আমাদের মননের বাতিঘর হিসেবে। একুশ এখন সারা বিশ্বের ভাষা ও অধিকারজনিত সংগ্রাম ও মর্যাদার প্রতীক। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অহংকার ‘শহীদ মিনার’।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ  এর আয়োজনে, সম্মানিত উপস্থিতি

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃত এবং ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হবে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

আর এভাবেই বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চলমান। পাঠক, এখন সারা বিশ্বের ১৯১টি দেশে একযোগে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষা এখন আর বাংলা ভাষাভাষীর নয়, সারা বিশ্বের। ২০০২ সালে আমাদের ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়, ঠিক ওই বছরই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ সিয়েরা লিওন বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়।

ভাষা যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। মাতৃভাষাকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠেছে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। আর বাঙালির পরিচিত হওয়ার অন্যতম মাধ্যমও বাংলা।

বিশ্বের প্রতিটি দেশ জানে ভাষার জন্য বাঙালির অবদান। তাই হাজার হাজার ভাষার মধ্যে বাংলাকে সমগ্র বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। কোটি কোটি বাঙালির প্রাণের এ বাংলা ভাষা হোক আরো উন্নত ও গৌরবান্বিত।