ইবাদত কাকে বলে ,: ইবাদত শব্দের অর্থ আনুগত্য করা,বিনয়ী হওয়া, গোলামী করা, দাসত্ব করা। ইবাদত আরবি শব্দ। আমি ভাষায় শব্দ হলেও সকল ভাষাভাষী মুসলিমের কাছে এটি অতি পরিচিত। এটি একটি প্রসিদ্ধ ইসলামী পরিভাষা। আল-কোরআন এই শব্দটি বিভিন্নভাবে মোট ২৭৬ বার উল্লেখিত হয়েছে। ইবাদত শব্দটি আবাদা শব্দের ক্রিয়ামূল।
ইবাদতের পরিচয় দিতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (র:) বলেন,
ইবাদাত হচ্ছে রাসুলগণের মাধ্যমে আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন তা মেনে চলা। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ যা ভালবাসেন ও পসন্দ করেন এমন সকল প্রকাশ্য ও গোপনীয় কাজ ও কথার নাম ইবাদাত।
ইমাম কুরতুবী (র:) বলেন,
ইবাদাত হলো মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেওয়া এবং তার দ্বীনের বিধান সমূহের অনুসরণ করা, আর ইবাদাতের মূল হলো বিনয় এবং নিজেকে তুচ্ছ করে প্রকাশ করা।
ইবাদত কাকে বলে
ইবাদত মহান আল্লাহ তালার একত্ববাদের ঘোষণা। ইবাদত হচ্ছে নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহর বিধি-বিধান দিয়েছেন তা মেনে চলা। তিনি আরো বলেন আল্লাহ যা ভালোবাসেন ও যা পছন্দ করেন এমন সকল প্রকাশ্য গোপনীয় কাজ ও কথার নাম হলো ইবাদত।
ইবাদতের গুরুত্ব
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন আমি সৃষ্টি করেছি জ্বীন ও মানুষকে এজন্য যে তারা আমার ইবাদত করবে। (সূরা আল যিলযাল) আয়াত- ৫৬
ইবাদাতের শাব্দিক অর্থ হল নমনীয়তা। আর পারিভাষিক অর্থে ইবাদাত বলা হয় পরিপূর্ণ ভীতি, বিনয় ও ভালবাসার সমষ্টিকে।
ইবাদাতের মূল কথা হল কোন সত্ত্বার বড়ত্বকে মাথা পেতে নেয়া। অতঃপর তার সামনে নিজের স্বাধীনতাকে বিলীন করে দেয়া। অর্থাৎ তার আনুগত্যকে বরণ করে নেয়া।
এ আয়াতে আমরা এটা বুঝতে পারি যে, মানুষ ও জিন জাতি আল্লাহর একাত্মবাদ কে মান্য করে চলে। সবাই মুসলিম অর্থাৎ সবকিছুই আল্লাহর একাত্মবাদকে মান করে চলে।
যেমন: আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, হে মানুষ তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,
আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সুরা যারিয়াত: আয়াত—৫৬)
এ আয়াতে আমরা এটা বুঝতে পারছি যে, আল্লাহ চান যে, তার সৃষ্টি মানুষ ও জ্বিন যেন তার একত্ববাদকে মান্য করে চলে, কোন অবস্থাতেই যেন তারা তার সাথে শরিক স্থাপন না করে।
উল্লেখ্য যে, মানুষ ও জ্বিনদের কিছু অংশ ছাড়া বাকি সব সৃষ্টিই আল্লাহর ইবাদাত করে; সবাই মুসলিম অর্থাৎ সবকিছুই আল্লাহর একত্ববাদকে মান্য করে চলে।
মহান আল্লাহ বলেন, আমরা শুধু তোমারই ইবাদাত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থণা করি। (সুরা ফাতিহা: আয়াত নং – ৪)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, শুধু তারই ইবাদাত করতে হবে অর্থাৎ তার একত্ববাদকে মেনে চলতে হবে সকল ক্ষেত্রে এবং তিনি এও শিক্ষা দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র তার নিকটেই চাইতে হবে।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
হে মানুষ তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।
ইবাদতের ধাপ
ইবাদাতের ধাপ দুইটি বা এভাবে বলা যায় যে, ইবাদাত দুইটি অংশে বিভক্ত। এর প্রথম এবং মূল অংশ হচ্ছে ঈমান। আর অপরটি হল ইসলাম। ঈমান অর্থ হচ্ছে অন্তরে বিশ্বাস। ব্যাপক অর্থে তাওহীদের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সে সকল বিষয়ের প্রতি অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার নামই হচ্ছে ঈমান। আর ইসলাম হচ্ছে দুইটি বিষয়ের সমন্বয়।
এ তিন প্রকারের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলো—
১. ইবাদতে বদনী ঃ
অর্থাৎ শরীর কিংবা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যে সমস্ত ইবাদত সম্পাদিত হয়, তাকেই ‘ইবাদতে বদনী’ বা শারীরিক ইবাদত বলা হয়। যেমন- নামাজ পড়া, রোজা রাখা, অজু করা, কষ্ট করে হেঁটে মসজিদে যেয়ে জামাতে শরিক হয়ে নামাজ পড়া, স্ত্রী সন্তান-সন্ততিদের জন্য ভরণ-পোষণের নিয়তে হালাল পথে শরীরকে খাটিয়ে রোজগার বা কামাই করা, কর করে। পথ চলে আলিমে হক্কানী বুজুর্গানে-দীনের খেদমতে উপস্থিত হয়ে ফায়েজ হাসেল করা, দীন-ইসলামের ওয়াজ মাহফিলে শরিক হওয়া ইত্যাদি ইবাদতকেই শারীরিক ইবাদত বা ইবাদতে বদনী বলা হয়।
২. ইবাদতে মালী ঃ
অর্থাৎ আর্থিক ইবাদত। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত দ্বারা আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করে যে ইবাদত হয় তাকে ইবাদতে মালী’ বা আর্থিক ইবাদত বলা হয়। যেমন- ফেতরা, যাকাত, সদকা-খয়রাত ইত্যাদি।
৩. ইবাদেত রূহানী ঃ
অর্থাৎ আত্মার ইবাদত। আত্মার সাহায্যে যে সমস্ত ইবাদত করা হয়। তাকে ‘ইবাদতে রূহানী’ বা আত্মার ইবাদত বলা হয়। যেমন- আল্লাহ্ তা’আলার পবিত্র সত্তা সম্পর্কে মোরাকাবা-মোশাহাদা করা। মনে মনে আল্লাহর নামের জিকির করা, অন্তরে অন্তরে সারা জাহানের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে চিন্তা বা গবেষণা করা ইত্যাদি।
আর তা হল কথা এবং কাজ। কথা বলতে শাহাদাতাইন বা তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়াকে বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (স:) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল এই বাক্য উচ্চারণ করা। আর কাজ বলতে তাওহীদের ভেতরের যাবতীয় বিষয় কাজে পরিণত করা। বিশেষভাবে সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্ব এই চারটি বিষয়ের নির্দেশ ভালভাবে মান্য করা।
অতএব, আমরা বুঝতে পারলাম যে, তাওহীদের যাবতীয় বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া ও কাজে পরিণত করার নামই হচ্ছে ইবাদাত।
(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)