ইসলাম শব্দের অর্থ কি,অভিজ্ঞতাদের পরামর্শ অনুযায়ী

ইসলাম শব্দের অর্থ কি,“ইসলাম” শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই যা বোঝায় তা যদি কেউ মেনে চলে তাহলে সে একজন মুসলিম। হোক সে ব্যক্তি বর্তমানের কেউ অথবা অতীতের কেউ অথবা ভবিষ্যতের কেউ। অর্থাৎ,ইসলাম-বলতে যা বোঝায় তা যে কেউ মেনে চললে সে বর্তমানে মুসলিম, কেউ অতীতে মেনে থাকলে সেমুসলিমছিল এবং যে বা যারা ভবিষ্যতে মেনে চলবে তারাও হবেমুসলিম।



ইসলাম إسلام শব্দটি এসেছে

###আরবী সালাম سلام হতে যার একটা অর্থ শান্তি৷ সালাম শব্দের অপর একটি অর্থ হল পরিপূর্ণতা৷



আজকে অধিকাংশ মানুষজন সালাম এর অর্থ শান্তি হিসেবে জানে কিন্তু পরিপূর্ণতা এর অর্থ জানে না৷

অথবা ###আরবী সিলমুন (سِلْمٌ) হতে এসেছে যার অর্থ আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা৷

সুতরাং বাংলায় “ইসলাম ধর্ম” এর অর্থ দাড়াবে শান্তির ধর্ম, পরিপূর্ণতার ধর্ম, আত্মসমর্পণের ধর্ম অথবা আনুগত্যের ধর্ম৷

%%%মুসলিম مسلم শব্দের অর্থ বাংলায় দাড়াবে শান্তিকামী, পরিপূর্ণকামী, আত্মসমর্পক, আনুগত্যকামী৷



কেন আমাদের ধর্মের নাম “ইসলাম” হল? আমরা দেখতে পাই যে পৃথিবীর তথাকথিত ধর্মগুলোর প্রত্যেকটির নামকরন হয়েছে হয় কোন বিশেষ ব্যক্তি না হয় কোন বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর নাম অনুযায়ী।



“খ্রিসচিয়ানিটি” নামটি এসেছে “জিসাস ক্রাইস্ট” এর নাম থেকে;
বুদ্ধাইজম বা “ বৌদ্ধ ধর্ম” নাম হয়েছে সেই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা “গৌতম বুদ্ধ” এর নাম অনুযায়ী;
“জরথুসট্র” ধর্মের অনুসারীরা এই ধর্মের প্রবক্তা “জরথুসট্রের” নাম অনুযায়ী পরিচিত।
ঠিক একই ভাবে “ইহুদী” ধর্মের নাম হয়েছে এই ধর্মের অনুসারীদের গোত্রীয় নাম “ইয়াহুদা” থেকে।
বাকি ধর্মগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।

 

ইসলাম শব্দের অর্থ কি



তবে ইসলামের ব্যাপারটি একেবারেই ভিন্ন। কারণ ইসলাম কোন বিশেষ ব্যক্তি বা কোন বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর ধর্ম নয়। বরং ইসলাম এমন এক জীবন ব্যবস্থার নাম যা “ইসলাম” শব্দের অর্থ থেকেই বুঝা যায়। “ইসলাম” নামটি থেকে যা বুঝা যায় তা হল এই জীবন ব্যবস্থা কোন ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি অথবা এটি কোন বিচ্ছিন্ন একটি জাতি বা গোষ্ঠীর ধর্ম নয়। বরং ইসলামের দাবী হল পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকেই “ইসলাম” বলতে যা বোঝায় তা মেনে চলবে এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার বাস্তবায়ন ঘটাবে। 


অনেকে ইসলাম শব্দের অর্থ করেন শান্তি। আমাদের মুসলিম সমাজসহ বিভিন্ন ধর্মের পণ্ডিতরা এবং রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে গ্রাম্যপুলিশ পর্যন্ত একই অর্থ করেন। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য ও আলোচানা সভায় জ্ঞানী পণ্ডিতরা ইসলাম অর্থ শান্তি আখ্যায়িত করে থাকেন। কারণ এদের মগজটা সেভাবেই ধোলাই করা।

যারা ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা জানে না এবং ইসলাম সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান না থাকার কারণে তারাই দেশে ও জাতির সামনে বিকৃত বক্তব্য উপস্থাপন করে তারা জাতিকে ভাঙনের পথে ঠেলে দেয়। তাদের উত্তরসূরিরাই জঙ্গি নামক এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।

তাদের বক্তব্য হলো-এটি নিরীহ গোবেচারা টাইপের ধর্ম। অনেকটা খ্রিষ্টবাদের মতো। এক গালে চড় দিলে আরেক গাল পেতে দাও, তোমার কোর্তাটি নিয়ে গেলে জোব্বাটি দিয়ে যাও । এমন! আসলে কি তাই। বরং এটি সত্যের চরম অপলাপ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চক্রান্তের একটি অংশ মাত্র।


ইসলাম আরবি শব্দ যার অর্থ আত্মসমর্পণ করা। আর শান্তির আরবি শব্দ সালাম। আরবি ভাষার বিখ্যাত ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অভিধান ইবনে মনজুর রচিত ‘লিসান আল আরাব’-এ বলা হয়েছে ইসলাম শব্দটি ‘ইসতিসলাম’ শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে।

যার অর্থ হচ্ছে কারো কাছে নত হওয়া আত্মসমর্পণ করা। অনেকে মনে করেন ‘সালাম’ এই তিনটি অক্ষর থেকে যেহেতু ইসলাম ও সালাম উভয় শব্দের উৎপত্তি তাই উভয়ের অর্থ একই হবে। অথচ বাস্তবে একই মূল ধাতু থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন শব্দের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন : ‘সালাম’ থেকে উৎপন্ন শব্দসমূহ হলো : ইসলাম- আত্মসমর্পণ, সালাম- ভালো থাকা; শান্তি, সালমা-চামড়ার প্রস্তুতি (ট্যানারি), সালিমা- বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া (স্ত্রীবাচক), সালিম- বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া (পুংবাচক), আসলাম- সঁপে দেয়া, ইসতিসলামা- আত্মসমর্পণ করা, মুসলি- যাতে কোনো মতদ্বন্দ্ব হয়নি। (সাহিব বিন আব্বাদ রচিত আলমুহীত ফিল লোগা)


হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফিকাহ গ্রন্থে ইমাম ইবনে আবেদীন র: রচিত রুদদুল মুহতারিতে বলা হয়েছে- জেনে রাখো ইসলামের অর্থ দু’টি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় এটার অর্থ হচ্ছে ঈমান। আভিধানিক ও শাব্দিক অর্থে এর অর্থ হলো অত্মসমর্পণ এবং মান্য করা ঠিক যেভাবে ইমাম নাসাফী আল উমদাহের ব্যাখ্যা গ্রন্থে এসেছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া মাজমু আল ফতোয়ায়ে বলেছেন, ইসলামের অর্থের মধ্যে রয়েছে এক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা।



আরবী ভাষার অভিধান অনুযায়ী “ইসলাম” শব্দটির অর্থ হল “আত্মসমর্পণ করা”, “নিজেকে বিনয়াবনত করা”, “হুকুম মান্য করা”, “কোন আপত্তি ছাড়াই আদেশ-নিষেধ মেনে চলা”, “সর্বান্তকরণে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের ইবাদত করা”। ,



তিনি যা বলেছেন তার সবকিছুই বিশ্বাস করা এবং তাঁর উপরেই বিশ্বাস এবং আস্থা রাখা। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্য যে জীবন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন তার নামই হল “ইসলাম”



ঈমান ও ইসলাম
ঈমান এবং ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ঈমান ছাড়া যেমন ইসলাম মূল্যহীন তেমন ইসলাম ছাড়া ঈমান মূল্যহীন। একটি ছাড়া অপরটি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমান এবং ইসলাম এই দুটির সমন্বয়ই হচ্ছে ইবাদাত। অর্থাৎ তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কাজে বাস্তবায়ন করার নামই ইবাদাত।

 

আর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। ইসলাম ছাড়া শুধু ঈমান ইবাদাত বলে গন্য হবে না আবার ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম ইবাদাত বলে গন্য হবে না। তাই আমাদেরকে তাওহীদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে তারপর মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। তবেই সেটা ইবাদাত হিসাবে আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য হবে।



ইসলাম আহলে কিতাবদের কিভাবে ডেকেছে



“বল :হে আহলে কিতাব! এস এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের। তা হচ্ছে: আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না। তার সাথে কাউকে শরিক করবো না। আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজেদের রব হিসেবে গ্রহণ করব না। যদি তারা এই দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে পরিষ্কার বলে দাও: তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা অবশ্যই একনিষ্ঠ মুসলিম ( একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যকারী)

সূরা আল ইমরান এর ১৯ নম্বর আয়াত।



আল্লাহর নিকট ইসলাম একমাত্র দিন-জীবনবিধান। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তারা এই দিন থেকে সরে গিয়ে যেসব বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছ, সেগুলো অবলম্বনের এছাড়া আর কোন কারণই ছিল না যে, প্রকৃত জ্ঞান এসে যাওয়ার পর তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করার জন্য এমনটি করেছে। আর যে কেউ আল্লাহর বিধান ও নির্দেশের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে, তার কাছ থেকে হিসেব নিতে আল্লাহর মোটেও দেরি হয়না-১৯ ।



ইসলাম আমাদের কি শিক্ষা দেয়


অর্থাৎ আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য একটিমাত্র জীবন ব্যবস্থা ও একটি মাত্র জীবনবিধান সঠিক ও নির্ভুল বলে গৃহীত। সেটি হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে নিজের মালিক ও মাবুদ বলে স্বীকার করে নেবে এবং তার এবাদ্‌ বন্দেগী ও দাসত্বের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সুপর্দ করে দেবে।

তার বন্দেগী করার পদ্ধতি নিজে আবিষ্কার করবে না।বরং তিনি নিজের নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে যে হেদায়াত ও বিধান পাঠিয়েছেন কোন প্রকার কমবেশি না করে তার অনুসরণ করবে। এই চিন্তা ও কর্ম পদ্ধতির নাম ‘’ইসলাম’’ আর বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টার ও প্রভুর নিজের সৃষ্টিকূল ও প্রজা সাধারণের জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কর্মপদ্ধতির বৈধতার স্বীকৃতি না দেওয়া ও পুরোপুরি ন্যায়সঙ্গত।

 

মানুষ তার নির্বুদ্ধিতার কারণে নাস্তিকবাদ থেকে নিয়ে শিরক ও মূর্তিপূজা পর্যন্ত যে কোন মতবাদ ও যে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য বৈধ মনে করতে পারে কিন্তু বিশ্ব-জাহানের প্রভুর দৃষ্টিতে এগুলো নিছক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়।


আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ার যে কোন অঞ্চলে যে কোন যুগে যে নবী এসেছেন, তার দিনই ছিল ইসলাম। দুনিয়ার যে কোন জাতির ওপর যে কিতাব নাযিল হয়েছে, তাই ইসলামের শিক্ষা দান করেছে। এই আসল দিনকে বিকৃত করে এবং তার মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে যেসব ধর্ম ও মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে, তাদের জন্য উদ্ভবের কারণ এছাড়া আর কিছুই ছিল না য্‌ লুকেরা নিজের বৈধ সীমা অতিক্রম করে অধিকার, স্বার্থ ও বিশিষ্টতা অর্জন করতে চেয়েছে। আর এসব অর্জন করতে গিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো আসল দিনের আকীদা-বিশ্বাস, মূলনীতি ও বিস্তারিত বিধান পরিবর্তন করে ফেলেছে।



হে নবী! বলঃ’’ আমরা আল্লাহকে মানি, আমাদের উপর অবতীর্ণ শিক্ষাকে মানি,ইব্রাহি্‌ ইসমাইল, ইসাক ইয়াকুব, ও ইয়াকুব সন্তানদের উপর অবতীর্ণ শিক্ষাকেও মানি এবংমুসা, ইশা ও অন্যান্য নবীদের কে তাদের রবের পক্ষ থেকে যে হেদায়াত দান করা হয় তার ওপর ঈমান রাখি ।আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না ।এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত( মুসলিম) ৮৪। এ আনুগত্য( ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত।.৮৫।

(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)