১৯৫২ সালে রক্ত দিয়ে যে ইতিহাস লেখা হয়েছিল সেই একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব, এবং এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জন্য সারা পৃথিবীতে গৌরবান্বিত করছে বাঙালি ভাষার জন্য।
একুশে ফেব্রুয়ারির রচনাতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো কোটেশন এই কোটেশনের ভিতরে রয়েছে তার গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হলো কারণ আমাদের এই মেন কোটেশন যদি মনে থাকে তাহলে আমরা পরবর্তী ধাপগুলো ভালোভাবে লিখতে পারবো বা বলতে পারব কিন্তু এগুলো যদি মনে না থাকে তাহলে আমরা সবকিছু ভুলে যাব
কোটেশন এর পয়েন্ট আউট করা হলো
- ভূমিকা
ইতিহাস
আমাদের শহীদ মিনার
জাতীয়তাবোধ ও বৈপ্লবিক চেতনা
একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য
মাতৃভাষা কি
মাতৃভাষার গুরুত্ব
মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতি
ভাষা শিক্ষা ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন
উপসংহার
এই কোটেশন দিয়ে আমরা যদি রচনাগুলো পরীক্ষার খাতা, এবং যেকোনো পরীক্ষায় লিখতে চাইলে সবথেকে বড় রচনা লিখতে পারবে, এজন্য প্রয়োজন কোটেশন আকারে আমাদের রচনাগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার
যদি কোটেশন মনে থাকে তাহলে আমরা পরবর্তী, কথাগুলো ভাবে লিখতে পারি, কিন্তু আমরা কোটেশন ভুলে গেলে তখন সবকিছু ভুলে যায়, এ জন্য আজকের এই একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা এর কোটেশন সম্পর্কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আলাদা পয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে, এজন্য ভালো লাগবে আশা করি
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা সম্পর্কে আমাদেরকে জানতে হবে এবং আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আরও কিছু বিষয় জেনে নেব
- একুশে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ রচনা
- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রচনা
- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা
পৃথিবীতে প্রত্যেকটি দেশে কিছু গৌরব উজ্জ্বল দিন থাকে যেদিন কে ঘিরে তারা আনন্দ উল্লাস এবং তাদের ইতিহাস কে স্মরণ করে তেমনি ভাবে আমাদের দেশে একুশে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে একটি দিন যেদিনকে ঘিরে আমরা আন্তর্জাতিকভাবেও এগিয়ে রয়েছে এক্ষেত্রে ১৯৫২ সালে কিছু তাজা প্রাণ রক্ত দিয়ে আমাদেরকে এই দিনের সাক্ষী করে গিয়েছে, যার জন্য আমরা তাদেরকে স্মরণ করতে এই দিনটি উদযাপন করি এবং আমাদের মাতৃভাষাকে সারা পৃথিবীতে পৌঁছায় গৌরব বোধ করি।
মা, মাটি শব্দগুলোর সাথে আমাদের অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে । নিজ দেশ, নিজের ভাষা এগুলোর প্রতি সকল মানুষের ভালোবাসাটা খাঁটি স্বর্ণে বাধা। মাতৃভাষায় ভাবপ্রকাশ ছাড়া কোন জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকে না, মুছে যায় তার স্বতন্ত্রতা । বাঙালি জাতি ,বাংলা ভাষা এ যেন চির ঐতিহ্যের কল্পকথা।
শুনেছো দেশবাসী ! ভাষার প্রশ্নে রক্তদানের কথা?
তবে, দেখে যাও বাঙালির ৫২-র আন্দোলনের স্মৃতি গাঁথা ।
যেই বাঙালি দিয়েছিল প্রাণ, হাতে তুলেছিল অস্ত্র
ভেঙে দিয়েছিল জিন্নাহ, খাজা নাজিমুদ্দিনের ষড়যন্ত্র ।
সেই বাঙালির ইতিহাস আজ সকল দেশের তরে
গৌরবের সহিত সবাই শহীদদের স্মরণ করে।
ভাষার জন্য রক্তদানের ইতিহাস শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের আছে আর কোন জাতির ইতিহাসে এমন রক্তেভেজা হয়নি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ঝাপিয়ে পড়েনি, সেই স্বার্থ ছিল গোটা বাঙালী জাতির। আমাদের ইতিহাসে এমন অনেক গল্প আছে যেগুলো আমরা গৌরবের সাথে নতুন প্রজন্মকে জানাতে পারি, তার মধ্যে ভাষা আন্দোলন অন্যতম। এটা এমন এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস যেখানে ভাষাশহীদরা তাদেরকে শুধুমাত্র বইয়ের ভাঁজে কথিত কয়েকটি শব্দ উপহার দিই নি, তারা আমাদেরকে উপহার দিয়েছে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। যে অধিকার আজ বিশ্ব স্বীকৃত।
বলা হয় , স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন । তার প্রমাণ আমরা আজ আমাদের দেশে মাতৃভাষা ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি । যে মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা সেই মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে আমরা বিদেশি ভাষার প্রতি দিন দিন তীব্র ভাবে আকৃষ্ট হচ্ছি।
আমরা ভুলে যাচ্ছি কতটা সংগ্রামের পথ পেরিয়ে তারা বাংলা কে প্রতিষ্ঠা করেছিল। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধুমাত্র শহীদদের স্মরণ করার জন্য নয় বরং বিশ্বকে জানান দেওয়ার জন্য ,বাঙালিরা কতটা ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে । আর সেই বাংলা ভাষার মর্যাদা যেন বিশ্বমানের হয় তার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এই দিবসটি পালন করা হয়। তবে এর অমর্যাদা আমরা নিজেরাই করি তাহলে অন্য জাতি সেটাকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে রাখবে সেটা কি ভাবে কাম্য করি আমরা।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন তো কখনই বলেনি, বাংলা ছাড়া আমরা আর কিছু পড়ব না। ভাষার লড়াই শুরুই হয়েছিল সকল ভাষা এমনকি আঞ্চলিক ভাষারও সমান মর্যাদার দাবিতে। তারা তো ইংরেজি, আরবী, উর্দু বা অন্যকোন ভাষা শেখা, বলা বা লেখার প্রতি কোন অনীহা দেখাননি। তাহলে কেন নিজ মাতৃভাষা বাংলাকে এত অসম্মান করে চলেছি এই আমরা, যারা বাঙালি হিসেবে নিজ দেশকে মুক্ত করেছি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে এবং সালাম-বরকত, রফিক, জব্বারসহ অগণিত শহীদদের প্রাণ বলিদানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে অর্জন করেছি।
আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদেশী ভাষা এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটিকেও শৈশবকাল থেকেই সে বিদেশি ভাষার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা হচ্ছে। মনে করা হয়, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বিদেশী ভাষা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই । কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে,
শেকড়কে অবহেলা করে কখনোই দৃঢ় ভিত স্থাপন করা যায় না ।
তেমনই মাতৃভাষাকে অবহেলা করে কোন জাতি কখনো উন্নতি লাভ করতে পারবে না। আমরা এই প্রজন্ম যেমন মাতৃভাষাকে অবহেলা করছি, আমাদের দেখে পরবর্তী প্রজন্ম ঠিকভাবে এভাবেই অবহেলা করতে শিখবে। ধীরে ধীরে এই ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস বিলীন হয়ে যাবে। যা কোন জাতির জন্য লজ্জাজনক।
বাংলা মায়ের অবমাননার মধ্য দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছি। উল্টো দেশে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে।
ভাবলে অবাক লাগে, যে দেশ রক্ত দিয়ে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেই দেশেও আজ ভাষা সংগ্রামের এতগুলো বছর পরেও বাংলাকে সর্বস্তরে ব্যবহারে অনীহা লজ্জাজনকভাবে দৃশ্যমান।
, ইংরেজি এমনভাবে সর্বত্র চেপে বসেছে যে, বাংলার অপমান বাড়িয়েই যাচ্ছে নিঃসঙ্কোচে। স্কুল-কলেজ, বাড়িঘর, দোকানপাট, অফিস-আদালত, বেতার-টেলিভিশন কোথাও বাংলা ব্যবহারে কোন তোয়াক্কাই নেই। প্রযুক্তি উন্নতির অগ্রযাত্রায় আমরা এগিয়ে চলেছি বটে কিন্তু মাতৃভাষাকে অবমাননা করে।
শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় অফিস-আদালত দোকানপাট হাসপাতাল সকল ক্ষেত্রেই বিদেশি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা যেখানে যেকোন শিক্ষা ভিত্তি স্তর সেখানে বাংলা মিডিয়াম থেকে ইংরেজি মিডিয়াম এর দিকে পিতামাতারা বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন । এবং সেখান থেকে ধাপে ধাপে বিদেশি ভাষার প্রতি ছেলেমেয়েদেরকে এগিয়ে দিচ্ছেন।
এরপর যখন উচ্চশিক্ষার কথা আসে তখন আমরা স্বচক্ষে প্রমান দেখতে পাই। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি যে কোন প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি কে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় । অন্যান্য দেশে নিজেদের চাহিদা বৃদ্ধি করতেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিদেশী ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। যে ভাষা কে আমরা এত কষ্টের পর অর্জন করতে পেরেছি সে ভাষাকে একপাশে রেখে কেন বিদেশি ভাষা কে বেশি প্রাধান্য দেব? বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে যেখানে আমাদের দেশে বাধ্যতামূলক থাকার কথা সেখানে নেই কোন বাধ্যবাধকতা।
শুধুমাত্র ভাষার এমন অপ চর্চার ফলেই আমাদের জীবন, সংস্কৃতি, সভ্যতায় ধীরে ধীরে স্বকীয়তা লোপ পাচ্ছে। এই প্রজন্মের বাংলা গানের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই। তাদের কথাবার্তা, চালচলন কোন কিছুতে বাঙালিয়ানার ছাপ নেই। বাঙালির উৎসব বলতে যে কয়েকটি পালন করা হয় তাতেও রয়েছে বিদেশী সংস্কৃতির ছাপ। আমরা হয়তো বাঙালি সংস্কৃতি মানি, বাঙালি উৎসব পালন করি কিন্তু সেগুলো পালন করার পদ্ধতিটা বিদেশি উপায়ে। আর এ সবকিছু আমাদের মাঝে জেঁকে বসেছে শুধুমাত্র এই বাংলা ভাষাকে অবহেলা করার জন্য।
যেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও বাংলাদেশেই বাংলা ভাষার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে না সেখানে বিদেশে কীভাবে বাংলাভাষায় গুরুত্ব আশা করা যায়!
আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত যখন আমাদের সন্তানেরা আমাদের সামনে বাংলা ভাষাকে অবহেলা করে। আমাদের তখনই লজ্জা হওয়া উচিত যখন আমাদের সন্তানরা বিদেশি ভাষায় বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করে নিয়ে আসে অথচ বাঙালি সংস্কৃতি বাংলা ভাষার প্রতি তাদের কোনো ভালোবাসা নেই । বাংলা ভাষার উন্নতির কথা না ভেবে তারা যখন বিদেশি ভাষায় দেশের উন্নতির কথা ভাবে।
এখন ভাষা দিবসটির চরিত্র পাল্টে গেছে। আগে একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল একটি আন্দোলন, এখন এটি একটি অনুষ্ঠান। আন্দোলনে আবেগ থাকে, প্রণোদনা থাকে। অনুষ্ঠানে তা থাকে না। এখন এটি আনন্দের অনুষ্ঠান হয়ে দাড়িয়েছে। যার প্রকৃত উদ্দেশ্য দিবসটি পালন করার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়।
মাতৃভাষা আন্দোলনের সময় শিক্ষিত শ্রেণি থেকে শুরু করে একেবারে গ্রামের সহজ-সরল মানুষও যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ সব শ্রেণির মানুষের কাছে মহান একুশের সত্যিকার বার্তা যাচ্ছে না। মাতৃভাষার সত্যিকার মর্যাদা তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন সব শ্রেণির মানুষ এই দিবসটি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখবে এবং সচেতন হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মূল লক্ষ্য পৃথিবীর দলিত, উপেক্ষিত ভাষাগুলোর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য জোগানো। যেসব জাতির মুখে নিজের ভাষা মূক, তাকে জীবন্ত করে তোলা। বাংলা ভাষা বিশ্বের একটি সমৃদ্ধ ভাষা বটে, কিন্তু উপেক্ষিত ভাষা। তাই বাঙালি জাতি হিসেবে নিজ ভাষা কে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। শহীদদের স্মৃতি স্মরণ করার পাশাপাশি এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য মাথায় রেখে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষাকে যেন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করে তুলতে পারি এটাই আমাদের প্রত্যাশা।