কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা , কোয়েল পাখির পাঁচটি ডিম সমান মুরগির একটি ডিম। কিন্তু আকার দেখে বোকা বনে যাবেন না! কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও পুষ্টিকর উপাদান যা মুরগির ডিমে নেই। এমনকি চীনা ওষুধেও এই ডিমের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। আসুন জেনে নেই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে:
ভরপুর পুষ্টিগুণ
কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন ও খনিজের প্রাচুর্য। এতে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কোয়েল পাখির ডিম শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করার পাশাপাশি রক্ত থেকে ক্ষতিকর ও টক্সিন উপাদান বের করতেও উপকারী ভূমিকা পালন করে। এতে করে সাধারণ শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার হার কমে যায় অনেকখানি।
এটি গর্ভাবস্থায় ও শিশুর জন্মগত সমস্যা প্রতিরোধে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর হাড় গঠনেও দারুণভাবে কার্যকর।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই অ্যালার্জিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কোয়েলের ডিম এসব সর্দি ও কাশির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এতে রয়েছে অ্যালার্জি প্রতিরোধকারী উপাদান। গবেষণায় দেখা যায় কোয়েলের কাঁচা ডিম অ্যালার্জির লক্ষ্মণ ও মাত্রা উভয়ই কমিয়ে দিতে পারে।
বাড়ায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
কোয়েল পাখির ডিমে উচ্চমাত্রার আয়রন থাকার ফলে এই খাদ্য উপাদানটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা বা অ্যানিমিয়া আছে, নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম গ্রহণে তারা উপকার পাবেন।
হাঁপানি শিথিল করে
কোয়েলের ডিমের অ্যালার্জি প্রতিরোধকারী উপাদান হাঁপানির বিরুদ্ধেও কাজ করে। ধুলোবালির জীবাণুতে আক্রান্ত ১৮০ জন হাঁপানি আক্রান্ত শিশু নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা কোয়েল পাখির ডিম খেয়েছে তাদের হাঁপানির তীব্রতা ও অস্থিরতা উল্লেখযোগ্যহারে কম।
ত্বক কোমল রাখে
কোয়েলের ডিমের সাদা অংশে লাইসিন-৮ নামে এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। ত্বকে কোলাজেন গঠনে লাইসিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোলাজেন হলো একটি প্রোটিনের নাম যা ত্বক কোমল রাখে ও ত্বকের প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের শরীর এ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করে না। তাই এর ঘাটতি পূরণে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
কোয়েলের ডিমে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম। এই মিনারেলটি আর্টারি ও রক্তনালীকার চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেওয়া হতে প্রতিরোধ করে।
রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে ও চোখ ভালো রাখে
এই ডিম ভিটামিন ‘এ’ এর ভালো উৎস। যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ভিটামিন ‘এ’ অল্প আলোয় চোখকে দেখতে সাহায্য করে ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। এছাড়াও ভিটামিন ‘এ’ চোখের কর্নিয়া ও অন্য অংশে পুষ্টি দেয়। এর অভাবে বাচ্চাদের রাতকানা রোগ হয়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে কাজ করে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার ঘরোয়া সমাধান হিসেবে কোয়েল পাখির ডিম খুব ভালো কাজ করবে। কোয়েলের ডিমে থাকা শক্তিশালি অ্যালকালাইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে কাজ করে এবং খাদ্য ভালোভাবে হজম ও শোষণে ভূমিকা রাখে।
বার্ধক্য প্রতিরোধ করে
ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ অনুযায়ী কোয়েলের ডিম বয়সের বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে। কোয়েলের ডিমে কোলিন নামে এক ধরনের পুষ্টি থাকে যা মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ম রাখে, বিশেষত বয়স বাড়ার ব্যাপারে। এছাড়াও এতে ভিটামিন এ, সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক থাকে যা ত্বকের জন্য ভালো। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।
ডায়াবেটিস মোকাবিলা করে
ডায়াবেটিস একটি বিপদজনক অবস্থা যা কেবল বাড়তেই থাকে। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধে খাবার তালিকায় কোয়েলের ডিমের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়।
কমায় প্রদাহ ও অ্যালার্জির সমস্যা
এই ডিমে থাকে ওভোমিউকয়েড (Ovomucoid) নামক বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অ্যালার্জিক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের প্রদাহ ও অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাবকে কমাতে ভূমিকা পালন করে।
প্রথমেই মাথায় রাখা দরকার কোয়েলের ডিম খুবই ছোট। একটি কোয়েল পাখির ডিম বড়জোর ৯ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। যেখানে একটি মুরগির ডিম ৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। তাই পরিমাণের দিক দিয়ে ৫টি কোয়েলের ডিম একটি মুরগির ডিমের সমপর্যায়ের হয়ে থাকে। আসুন জেনে নিই একটি কোয়েলের ডিমে কতটা পুষ্টি উপাদান থাকে।
ক্যালরিঃ ১৪
ফ্যাটঃ ১ গ্রাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডঃ ৪ মিলিগ্রাম
ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডঃ ৮৪ মিলিগ্রাম
প্রোটিনঃ ১.২ গ্রাম
কোলেস্টেরলঃ ৭৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ও মিনারেল
ভিটামিন এঃ ১%
রিবোফ্লাভিনঃ ৪%
ভিটামিন বি১২ঃ ২%
প্যানথোনিক এসিডঃ ২%
আয়রনঃ ২%
সেলেনিয়ামঃ ৪%
ফসসরাসঃ ২%
একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, কোয়েলের ডিমে তার আকারের তুলনায় অনেক বেশি আমিষ পাওয়া যায়। একটি কোয়েল পাখির ডিম থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশই আসে আমিষ থেকে! ক্ষুদ্রাকৃতির এ ডিমগুলো ভিটামিন ও খণিজ লবণে পরিপূর্ণও বটে। পরিমাণে কম মনে হলেও সমপরিমাণ মুরগির ডিমের তুলনায় তা অনেক বেশি।
সতর্কতা
কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। কিন্তু এটি অতি উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল সম্পন্ন। ১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে ৮৪৪ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। যা মুরগির ডিমের চেয়েও বেশি মাত্রার কোলেস্টেরল। তাই আপনি যদি দৈনিক প্রয়োজনীয় ২০০ গ্রামের বেশি কোলেস্টেরল খেয়ে ফেলতে না চান তাহলে গপাগপ কোয়েলের ডিম খাওয়ার আগে অবশ্যই একটু সাবধানী হতে হবে।
(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)