গোসলের ফরজ কয়টি , গোসল কাকে বলে ? পরিভাষায় আপাদমস্তক পুরো শরীর ধৌত করাকে গোসল বলা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। (সূরা মায়িদাহ : ৬)।
গোসলের ফরজ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
গোসলের ফরজ তিনটি। যথা,
১.ভালোভাবে কুলি করা।
২. নাকের ভিতরে পানি দেওয়া।
৩. পুরো শরীর ধৌত করা।
আল্লাহ বলেন- হে ঈমানদার গণ! নামাযের ধারে-কাছে যেয়ো না যখন তোমরা নেশা অবস্থায় মাতাল হয়ে থাকো, যে পর্যন্ত না তোমরা বুঝো কি তোমরা বলছো, অথবা যৌন-সম্ভোগ করার পরবর্তী অবস্থায়, যতক্ষণ না গোসল করেছ। [সূরা আন’নিসা : ৪৩ ]
গোসলের ফরজ কয়টি
তাই গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি এবং কখন গোসল ফরজ হয় অর্থাৎ কখন গোসলের ফরজ আদায় করা জরুরি তা আমাদের প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের ই জানা দরকার। আপনাদের সুবিধার্থেই আমরা আজকে গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গোসলের ফরজগুলো হলো—
গড়গড়াসহ কুলি করা
গোসলের প্রথম ফরজ হলো- গড়গড়াসহ কুলি করা। মুখের ভেতর অনেক সময় খাবারের উচ্ছিষ্ট জমে থাকে। গলার ভেতরেও কফ জমে থাকে। তাই গড়গড়াসহ কুলি করলে গলার কফ ও মুখের ভেতর জমে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ফরজ গোসলের অংশ হিসেবে কুলি করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৭ ও ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)
নাকে পানি দেওয়া
গোসলের আরেকটি ফরজ হলো- নাকের ভেতর পানি দেওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নাকে পানি দিয়েছেন। এ সম্পর্কিত একাধিক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)
সারা শরীরে পানি দেওয়া
এমনভাবে গোসল করতে হবে— যাতে শরীরের কোনো অঙ্গ শুকনো না থাকে। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন গোসল করতেন, তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকতো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭)
এবং যারা পবিত্র থাকে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন” (সূরা বাকারা : ২২২)
“সেথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ ভালবাসেন।” (সুরা তাওবা : ১০৮)
গোসলের সুন্নত ছয়টি
১. গোসল শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা।
২. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
৩. দুই হাতের কব্জি ওযুর মতো তিনবার পরিষ্কার করা।
৪. কাপড় অথবা শরীরের কোথাও অপবিত্র কোনো কিছু থাকলে— গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা।
৫. গোসলের আগে অজু করা। গোসলের স্থান নিচু হলে ও পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে টাখনুসহ দুই পা পরে পরিষ্কার করা।
৬. ডান দিকে তিনবার, বাম দিকে তিনবার ও মাথার ওপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা।
রতিক্রিয়া, শুক্রপাত হওয়া (স্বপ্নে বা জাগরণে) এবং নারীদের ঋতুস্রাব ও প্রসবোত্তর স্রাব সমাপ্ত হওয়া। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, প্রথম খন্ড, পৃষ্টা: ২৭৮)।
গোসল কখন ফরজ?
পাঁচটি কারণে গোসল ফরজ হয়। কারণগুলো হলো-
১. স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে কিংবা পুরুষের স্বপ্নদোষ হলে।
২. নারীদের ঋতুস্রাব অথবা পিরিয়ড হলে।
৩. সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলে।
৪. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য।
৫. কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।
আল্লাহ বলেন- হে ঈমানদার গণ! নামাযের ধারে-কাছে যেয়ো না যখন তোমরা নেশা অবস্থায় মাতাল হয়ে থাকো, যে পর্যন্ত না তোমরা বুঝো কি তোমরা বলছো, অথবা যৌন-সম্ভোগ করার পরবর্তী অবস্থায়, যতক্ষণ না গোসল করেছ। [সূরা আন’নিসা : ৪৩ ]
গোসল কখন সুন্নত?
চারটি কারণে গোসল সুন্নত। কারণগুলো হলো-
১. জুমার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
২. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
৩. ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত।
৪. হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সময় গোসল করা সুন্নত।
(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)