চোখ উঠলে কোন ড্রপ

চোখ উঠলে কোন ড্রপ , চোখ ওঠা কি । কেন চোখ উঠে? চোখের সাদা অংশ প্রচণ্ড লাল হয়ে যায়, চোখের পাতা ফুলে ওঠে, চোখে ব্যথা, চোখ খসখস করে মনে হওয়া এবং চোখের মধ্যে কাটা ফুটছে এমন সমস্যা দেখা দিলে তাকে চোখ ওঠা বলা হয়ে থাকে। চোখ ওঠাকে ডাক্তারি ভাষায় কনজাংটিভাইটিস বলে। মূলত চোখের আবরনে প্রদাহ হয়ে থাকে।

গরমে এবং বর্ষার সময়ে অতিরিক্ত চোখ ওঠা সমস্যা দেখা হওয়ার প্রবনতা বেশি থাকে।



চোখ ওঠে প্রধানত ভাইরাস জনিত কারণে। এটি এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ তাই একজনের হলে খুব দ্রুত পরিবারের সবার মধ্যে ছরিয়ে পরে। এছাড়াও অতিরিক্ত এলার্জি জনিত সমস্যার কারণেও চোখ ওঠে।

মূলত তিন কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকেঃ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং এলার্জি।

 

চোখ উঠলে কোন ড্রপ



চোখ ওঠার ঘরোয়া চিকিৎসা
চোখে ঠান্ডা পানির সেঁক নিতে পারেন। এতে চোখ ফোলা ও জ্বালাপোড়া কমে আসতে পারে। এজন্য একটা হালকা ঠান্ডা ফ্লানেলের কাপড় কয়েক মিনিট চোখে আলতোভাবে ধরে রাখবেন। এটি চোখ ঠান্ডা করে, ফলে আরাম লাগতে পারে।


চোখ পরিষ্কার করার জন্য পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ঠান্ডা করে নিন। এবার এক টুকরো পরিষ্কার সুতি কাপড় সেই পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে আলতোভাবে চোখের পাপড়িগুলো মুছে নিন। এভাবে চোখে জমে শক্ত হয়ে যাওয়া পুঁজ ও ময়লা সহজে পরিষ্কার করা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতি চোখের জন্য আলাদা আলাদা কাপড় ব্যবহার করবেন। যাতে এক চোখের জীবাণু অন্য চোখে না ছড়িয়ে পড়ে। কাপড়ের টুকরোর বদলে কটন প্যাডও ব্যবহার করতে পারেন।


চোখ পুরোপুরি সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত চোখের ভেতরে কোনো ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করবেন না। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।



কেন চোখ ওঠে

 


চোখ উঠলে চোখ লাল হয়ে যায়, কিছুটা ব্যথা ও খচখচ ভাব থাকে। এর সঙ্গে থাকে চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা। চোখ ওঠা হতে পারে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। এ ছাড়া ভাইরাস আক্রমণের কারণেও চোখ ওঠার সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ সময়ই ভাইরাসে চোখ ওঠে।

 



চোখ ওঠে বুঝবেন যেভাবে



অপরিষ্কার বা নোংরা জীবনযাপন চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। চোখ ওঠা রোগে চোখ লাল হয়ে যায়। আর এমনটি হয় এই কনজাঙ্কটিভার রক্তনালিগুলো প্রদাহর কারণে ফুলে বড় হয়ে যাওয়া এবং তাতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে।

ঘুম থেকে ওঠলে চোখ আঠা আঠা লাগা, সব সময় চোখের ভেতর কিছু একটা পড়েছে এমন অনুভূতি, চোখ চুলকানো এবং জ্বালাপোড়া করা, আলোর দিকে তাকালে অস্বস্তি লাগা, সবকিছু ঘোলা ঘোলা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের কোনায় ময়লা (যা কেতুর নামে প্রচলিত) জমা, চোখ ফুলে যাওয়া চোখ ওঠার লক্ষণ।



চোখ ওঠার ঔষধ


চোখ উঠলে বিভিন্ন চোখ ওঠার ড্রপের সাহায্যে চিকিৎসা করা যায়। যেমন—



আর্টিফিশিয়াল টিয়ার: এটি চোখের শুষ্ক ও খচখচে ভাব কমাতে সাহায্য করে। যেকোনো ধরনের চোখ ওঠায় এই ধরনের ড্রপ ব্যবহার করা যায়। ফার্মেসিতে এগুলো লুবজেল, ড্রাইলাইফ, অ্যাকুয়াফ্রেশ ও টিয়ারফ্রেশসহ বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। ব্যবহারের আগে সাথে থাকা নির্দেশিকা ভালোমতো পড়ে সেই অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।


অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ: ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ উঠলে এই ধরনের ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত ইনফেকশন সারাতে, জটিলতা কমাতে ও চোখ ওঠা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সাহায্য করতে পারে।[১৪]


ব্যাকটেরিয়াজনিত চোখ ওঠার চিকিৎসায় সাধারণত নিচের ক্ষেত্রগুলোতে চোখে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়—

চোখে পুঁজের মতো তরল জমলে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এমন কারও চোখ উঠলে
কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ইনফেকশন হয়েছে ধারণা করলে। যেমন: গনোরিয়া ও ক্ল্যামিডিয়া




চোখ উঠলে কোন ড্রপ ব্যবহার করবেন?


চোখ ওঠা খুব বড় রকমের কোনো চিন্তার রোগ নয়। চোখ উঠলে প্রাথমিক অবস্থায় ডাক্তার দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এটি সাধারণত সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনাআপনি সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়।

 


তবে জ্বালাপোড়া এবং অসহ্যনীয় কষ্ট থাকে চোখ ওঠার ২ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত।


সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে চোখ ওঠা রোগ সম্পূর্ণ না কমলে বুঝতে হবে আপনার চোখ ওঠা রোগটি দ্বিতীয় ধাপে চলে গিয়েছে। তাই আর দেরি না করে আপনি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করতে পারেন।

 


এছাড়া বেশি সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এই ড্রপটি ব্যবহার করলেই চোখ শতভাগ ঠিক হয়ে যায়।

তবে প্রাথমিক অবস্থায় যদি আপনি একটি ড্রপ ব্যবহার করেন তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কোনো দরকার হবে না। চোখ উঠলে কোন ড্রপ ব্যবহার করবেন তা অনেকেই জানেন না।

 


আবার চোখ একটি সেন্সেটিভ অঙ্গ।তাই আপনাকে সঠিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

এবিষয়ে সকল চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, চোখ ওঠার প্রাথমিক অবস্থায় দিনে তিন থেকে চারবার চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করতে হবে।

 


এর কারণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাইরাসের আক্রমণের পর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে থাকে। এ জন্য দিনে তিন থেকে চারবার চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করলে আর কোনো ভয় থাকে না।

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না হলেও সেকেন্ডারি ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য এটি ব্যবহার করা যায়। এই ড্রপ ব্যবহার নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই।

 


এতে কোনো সমস্যা হয় নাহ। এছাড়া চোখে চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে পারেন। এটিও ডাক্তাররা ব্যবহার করতে বলে থাকেন।

তবে এ ক্ষেত্র অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার চোখ ওঠার কারণ এলার্জি নাকি ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়া।

 



চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও সতর্কতা


সাধারণত এমনিতেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়
প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে
হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না
রোগীকে কালো চশমা পরতে হবে


ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে
চোখ মোছার জন্য আলাদা কাপড় ব্যবহার করতে হবে
চোখ ওঠা রোগীদের আলাদা থাকতে হবে, যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে
অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তরা ওষুধের দোকান থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ নেন। কিন্তু এ জাতীয় ড্রপ বেশি দিলে চোখের জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

যেমন: গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নিজে নিজে ওষুধের দোকান থেকে কোনো ধরনের ড্রপ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত না। চিকিৎসকরা অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট কিছু রোগীকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ দিয়ে থাকেন
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে



কারো চোখের খচখচে ভাবটা যদি বেশি হয়, বেশি পরিমাণে কেতুর জমে বা চোখে ঝাপসা দেখে, তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উত্তম
শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে এ রোগের চিকিৎসা একই। তবে, শিশুরা যেহেতু মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে না, সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উত্তম


অনেক সময় চোখ বেশি ফুলে যায় এবং কনজাংটিভায় পানি জমে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
খুব কমক্ষেত্রে এমন হয় যে, রোগীর চোখ দিয়ে রক্তও পড়ে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে


সাধারণভাবে চোখ লাল হলে ও সামান্য পানি পড়লে ৭ দিন অপেক্ষা করাই ভালো। যদি এই সময়ে ভালো না হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যেতে পারে


চোখ ওঠা রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. চন্দ্র শেখর মজুমদার বলেন, ‘সাধারণত এমনিই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তা ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকেই পরামর্শ নেওয়া উত্তম।’


(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)