জাজাকাল্লাহু খাইরান অর্থ কি , জাযাকাল্লাহু খাইরান – এর অর্থ কি? আপনি যখন কাউকে ভাল, সুন্দর বা তাঁর পছন্দসই কোন কাজ উপহার দেন তখন অধিকাংশ মানুষই আপনাকে বলে থাকেন, “জাযাকাল্লাহু খাইরান”।
.
প্রশ্ন হল, এই বাক্যটির অর্থ কি? আসুন জেনে নেই বাক্যটির অর্থ।
এর বেশ সুন্দর কয়েকটি অর্থ রয়েছে।
.
১। ﺧﻴﺮ ( খাইর) শব্দটি সে সমস্ত বিষয় বুঝায় যা আল্লাহর নিকট প্রিয়। তাই “খাইর” শব্দের মাধ্যমে আপনার জন্য সবরকমের কল্যাণ কামনা করা হল।
.
২। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে জান্নাত এবং জান্নাতে তাঁর দিদার দ্বারা সৌভাগ্যবান করুন।
.
৩। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে কাফিরদের স্থান জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন।
জাজাকাল্লাহু খাইরান অর্থ কি
.
৪। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনাকে সিরাতে মুস্তাক্বিম তথা সরল পথে পরিচালিত করেন।
.
৫। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনার উপর কোন অভিশপ্ত শয়তানকে চাপিয়ে না দেন।
.
৬। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করেন।
.
৭। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ শেষ দিবস পর্যন্ত আল্লাহ যেন আপনাকে মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারকারী করেন।
.
৮। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ যেন আপনাকে রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী করেন।
.
৯। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করুন।
.
১০। “জাযাকাল্লাহু খাইরান” আল্লাহ আপনাকে সবরকম কল্যাণ দান করুন।
জাযাকাল্লাহ্(উ) (আরবি: جَزَاكَ ٱللَّٰهُ) অথবা জাযাকাল্লাহু খায়রান (আরবি: جَزَاكَ ٱللَّٰهُ خَيْرًا) একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইসলামি বাক্য; যার অনেকগুলো অর্থ রয়েছে। তবে এই বাক্যের প্রধান/মূল অর্থ হলোঃ- “আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম পুরস্কার/প্রতিদান দিন”।
জাযাকাল্লাহ্(উ) বাক্যাংশটি অসমাপ্ত, কারণ এতে আছে ‘আল্লাহ্’ (অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা) এবং ‘জাযাক্(আ/ই)’ অর্থাৎ পুরস্কার প্রদান করা, কিন্তু এতে ‘খায়রান’ অন্তর্ভুক্ত নেই যার অর্থ হল ‘উত্তম’। জাযাকাল্লাহু খায়রান বললে কি পুরস্কারের/ প্রতিদানের কথা বলা হল তার অনুমান দরকার পড়ে না কারণ ‘খায়রান’ শব্দটি দ্বারা এটা নির্দিষ্ট হয়ে যায়।
যদিও ধন্যবাদ জানানোর পরিচিত আরবি শব্দটি হল ‘শুকরান’, জাযাকাল্লাহু খায়রান বাক্যটি মুসলিমরা ব্যবহার করে এই বিশ্বাসে যে, একজন মানুষ অন্যজনকে পর্যাপ্ত বিনিময় দান করতে পারে না, বরং আল্লাহ্ই সর্বোত্তম পুরস্কার/ প্রতিদান দান করতে সক্ষম।
.
.
এর আরো অসংখ্য অর্থ রয়েছে। কেননা খাইর ( ﺧﻴﺮ ) আল্লাহর নিকট অগুনিত। যা গণনা করা অসম্ভব। তবে আমরা বাক্যটির শাব্দিক অর্থ করি, “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন” বলে।
.
ﻋﻦ ﺃﺳﺎﻣﺔ ﺑﻦ ﺯﻳﺪ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﻣَﻦْ ﺻُﻨِﻊَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣَﻌْﺮُﻭﻑٌ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟِﻔَﺎﻋِﻠِﻪِ : ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ . ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺑْﻠَﻎَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ ) .
ﺭﻭﺍﻩ ” ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ” ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻓﻲ ” ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ”
.
অর্থঃ হযরত উসামা বিন যায়েদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো প্রতি কৃতজ্ঞতার আচরণ করা হলো তাই সে ব্যক্তি আচরণকারীকে “জাযাকাল্লাহু খাইরান” বলল, তাহলে সে তার যথাযোগ্য প্রশংসা করল।
মানুষ মাত্রই মানুষের উপকার করে। যে ব্যক্তি কারো উপকার করে তার জন্য দোয়া বা কল্যাণ কামনা করা প্রত্যেকেরই উচিত। এ বিষয়ে আমরা সাধারণত সতর্ক হই না। অথচ কেউ কারো উপকার পেয়ে এ দোয়া পড়ার পর শ্রবণকারীও দোয়াকারীর জন্য একটি দোয়া করা জরুরি হয়ে পড়ে। যা জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অতিব জরুরি।
উপকার বড় হোক আর ছোট হোক; উপকারকারীর জন্য দোয়া করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়ে গেছেন। হাদিসে এসেছে-
.
.
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ” ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻟِﺄَﺧِﻴﻪِ : ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ، ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺑْﻠَﻎَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ ”
.
অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন, কেউ যখন তার ভাইকে বলে, “জাযাকাল্লাহু খাইরান” তাহলে সে তার ভূয়সী প্রশংসা করল।]
জাজাকাল্লাহু খাইরান এর অনান্য অর্থসমূহ সম্পর্কে ধারনা নেয়া যাক-
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে জান্নাত ও জান্নাতে তার দিদার দ্বারা সৌভাগ্যবান করুন।
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে কাফিরদের স্থান জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন।
সৃষ্টিকর্তা যেন আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার উপর কোন অভিশপ্ত শয়তানকে চাপিয়ে না দেন।
সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করেন।
সৃষ্টিকর্তা যেন আপনাকে মাতা-পিতার প্রতি শেষ দিবস পর্যন্ত সদ্ব্যবহারকারী করেন।
সৃষ্টিকর্তা যেন আপনাকে রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী করেন।
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে নেক সন্তান দান করুন।
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সবরকম কল্যাণ দান করুন।
এরকম আরো অসংখ্য অর্থ রয়েছে, যা গণনা করা সম্ভব নয়।
.
.
ﻗﺎﻝ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﻟَﻮْ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻣَﺎ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻗَﻮْﻟِﻪِ ﻟِﺄَﺧِﻴﻪِ : ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ، ﻟَﺄَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ . ( ﺍﻟﻤﺼﻨﻒ ﻻﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ )
.
হযরত ঊমর (রাযি.) বলেন, তোমাদের কারো যদি জানা থাকত যে, তার অপর ভাইকে “জাযাকাল্লাহু খাইরান” বলার মধ্যে তার জন্য কি রয়েছে!
তাহলে তোমরা একে অপরের জন্য তা বেশি করে বলতে।
লেখাঃ ড. সাঈদ