জাযাকাল্লাহু খাইরান এর উত্তর

জাযাকাল্লাহু খাইরান এর উত্তর , জাযাকাল্লাহ খাইরান এর উত্তরে কী বলতে হয়? অনেকে ওয়া ইয়াকুম বলে,আবার ওয়া ইয়্যাক বলে!তাহলে কোনটি সঠিক?নারী- পুরুষের ক্ষেত্রে এর উত্তর আলাদ কী?


উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


হযরত উসামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪১৩


জাযাকাল্লাহু খাইরান এর উত্তর




(জাযাকাল্লাহ খাইরান) এটি একটি আরবী শব্দ এর অর্থ আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন তো যে আপনার জন্য যে দোয়া করে আপনার উচিত সেই পরিমান দোয়া তার জন্যও করা তাই আপনি এর উত্তেরে (ওয়া জাযাকাল্লাহু খাইরান) বলতে পারেন অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দান করুন অথবা বলতে পারেন (বারাকাল্লাহ) আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন



অন্য হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি তোমাদের সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ কর। (তাকে কিছু হাদিয়া দাও।) যদি কিছু দিতে না পার অন্তত তার জন্য দুআ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।-সুনানে আবু দাউদ ; আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী ২১৬



যেটা বলা সুন্নাহঃ পুরুষদের ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য বলা “জাযাকা-আল্লাহু খাইরন ( ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺧَﻴﺮً )” এবং মহিলাদের জন্য বলা “জাযাকি-আল্লাহু খাইরন ( ﺟَﺰَﺍﻙِ ﺍﻟﻠﻪُ ﺧَﻴﺮًﺍ )”।


কিন্তু আমরা দেখি অনেকে শুধু বলে “জাযাকা-আল্লাহ” অথবা শুধু “জাযাক” অথবা শুধু “JZK” এগুলো ব্যবহার উত্তম না। কাজেই এগুলোর পরিবর্তে সুন্নাহের উপর আমল করা উচিত এবং সংক্ষেপ করাকে পরিহার করা উচিত।



জাযাকাল্লাহু খায়রান অর্থ আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। শুকরানও আরবী শব্দ। এর অর্থ তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ধন্যবাদ বাংলা শব্দ। এটি প্রশংসাবাদ, সাধুবাদ বা কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক উক্তি। আর থ্যাংক ইউ ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।



ওয়া আনতুম ফা-জাযাকুমু-আল্লাহু খাইরন ( ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓَﺠَﺰَﺍﻛُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ)”


অর্থঃ তোমাকেও আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন) (শাইখ আলবানী আল-সহীহার ৩০৯৬ নং হাদিসে একে সহীহ বলেছেন, আল- তা’লিকাতুল হিসান আল সহীহ ইবনে হিব্বান ৬২৩১)।



এ শব্দগুলোর মধ্যে কোনটা আরবী, বাংলা বা ইংরেজি-এদিকে না তাকিয়ে শুধু এগুলোর অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে দেখব, জাযাকাল্লাহু খায়রান বাক্যটি সবচেয়ে সারগর্ভ। কারণ এতে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়, উপকারীর জন্য কল্যাণের প্রার্থনাও আছে। আর যদি বলা হয়, জাযাকাল্লাহু খায়রান ফিদ দারাইন (আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) তাহলে তো সোনায় সোহাগা।


সঠীক উত্তর হলোঃ “ওয়া আনতুম ফা-জাযাকুমু-আল্লাহু খাইরন ( ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓَﺠَﺰَﺍﻛُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ)”।
সতর্ককতা-
আমরা কখনো শুধুমাত্র ‘জাযাকাল্লাহু’ বলবো না। বরং ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলবো। কারণ ‘জাযাকাল্লাহু’ দ্বারা প্রতিদান ভালোও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। তাই ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলবো।


যখন কেউ জাযাক আল্লাহু খাইরান [বুখারী,হাঃ ৩৩৬; তিরমিযী,হাঃ২০৩৫] – বলে এর জবাবেঃ ‘ওয়া আনতুম ফা জাযাকুম আল্লাহ খাইরান ‘ (এবং আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন) [সহীহ ইবনে হিব্বান,হাঃ ৬২৩১;সহীহ তাহক্বীক আলবানী] বলতে হয়।


জাযাকাল্লাহু খাইরান- এর জবাবে জাযাকাল্লাহু খাইরান বলবেন। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, একবার উসাইদ বিন হুযাইর রাযি. কোন এক প্রেক্ষিতে শুকরিয়া স্বরূপ রাসূল ﷺ -কে বললেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বা ‘জাযাকাল্লাহু আত্বইয়াবাল জাযা’। উত্তরে তিনি বললেন, ‘ফা জাযাকুমুল্লাহু খায়রান’ বা ‘ফা’জাযাকাল্লাহু আত্বইয়াবাল জাযা’। (নাসাই কুবরা ৮০২৪ ইবনে হিববান ৭২৭৭ মুসতাদরাক হাকিম ৪/৭৯)


যদি কারো উপকার করে এবং এর জন্য সে যদি তাকে “জাযাকা-আল্লাহু খাইরন ( ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺧَﻴﺮً ) বলে তাহলে সে যেনো তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো। বর্ণনায়ঃ আল তিরমিযী ২০৩৫ শাইখ আলবানী সহীহ আল তিরমিযীতে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।



তাছাড়া ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

لَوْ يَعْلَمُ أَحَدُكُمْ مَا لَهُ فِي قَوْلِهِ لِأَخِيهِ : جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا , لَأَكْثَرَ مِنْهَا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ


তোমরা যদি জানতে, তোমাদের ভাইদের জন্যে তোমাদের বলা কথা ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ এর মধ্যে কী কল্যাণ নিহিত রয়েছে, তাহলে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগী হয়ে বেশি বেশি ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলতে। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৫/৩২২)


কিন্তু আমরা দেখি অনেকে শুধু বলে “জাযাকা-আল্লাহ” অথবা শুধু “জাযাক” অথবা শুধু “JZK” এগুলো ব্যবহার উত্তম না। কাজেই এগুলোর পরিবর্তে সুন্নাহের উপর আমল করা উচিত এবং সংক্ষেপ করাকে পরিহার করা উচিত।



কেউ জাযাকাল্লাহ বললে উত্তরে ওয়া ইয়্যাকা বা ওয়া ইয়্যাকুমও বলা যায়। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকেও দান করুন।

কখনো এমন হতে পারে যে, যাকে জাযাকাল্লাহ বলা হল তিনি তা বুঝলেন না। সেক্ষেত্রে আমরা জাযাকাল্লাহর সাথে ধন্যবাদও বলতে পারি।