দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা,অভিজ্ঞতাদের পরামর্শ অনুযায়ী

দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা , দারুচিনির বাকল গাছের ছালের চেয়ে পাতলা, হলুদ এবং বেশি সুগন্ধযুক্ত। এটি রঙে নরম এবং মসৃণ। দারুচিনি পাতা ঘষলে এটি থেকে একটি তীব্র গন্ধ বের হয়। দারুচিনি অনেক রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।



দারুচিনির পুষ্টিগুণ
এটি পুষ্টিকর এবং প্রচুর ভিটামিনে পূর্ণ।

 



প্রতি ১০০ গ্রামে দারুচিনিতে পানি ১০.৫৮ গ্রাম, এনার্জি ২৪৭ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ৩.৯৯ গ্রাম, ফ্যাট১.২৪ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৮০.৫৯ গ্রাম এবং শর্করা ২১৭ গ্রাম থাকে।

 

 

দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা

 




দারুচিনি কি?
দারুচিনি একটি মশলা। দারুচিনির বাকল গাছের ছালের চেয়ে পাতলা, হলুদ এবং বেশি সুগন্ধযুক্ত। এটি রঙে নরম এবং মসৃণ। ফল ছিঁড়ে ফেলা হলে ভেতর থেকে টারপেনটাইনের মতো গন্ধ আসে। এর ফুল ছোট, সবুজ বা সাদা রঙের হয়। আপনি যদি দারুচিনি পাতা ঘষেন তবে এটি একটি তীব্র গন্ধ বের হয়। দারুচিনি অনেক রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।


দারুচিনির উপকারিতা


এই মসলার বিশেষ গুণ হল এটি শুধু রান্নাঘরেই ব্যবহৃত হয় না, দারুচিনি অনেক ধরনের ওষুধ ও রোগের চিকিৎসায়ও উপকারী। দারুচিনি বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

 


. দারুচিনির মূল উপকারিতা হলো এর ঔষুধি গুণাবলি। বিজ্ঞানীরা এর অনেক ঔষধি গুণাবলি খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বিপাক হার বৃদ্ধি।

 



ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য দারুচিনি খানঃ 500 মিলিগ্রাম শুঁথি পাউডার, 500 মিলিগ্রাম এলাচ এবং 500 মিলিগ্রাম দারুচিনি পিষে নিন। সকাল-সন্ধ্যা খাবার আগে খেলে ক্ষুধা বাড়ে।

 

 


দারুচিনি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। দারুচিনিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মানবদেহে ফ্রি র্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

 


দারুচিনিতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, এই মসলা এবং এর অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলোর শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর এ কারণে এটি শরীরকে সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে এবং টিস্যুর ক্ষতি মেরামত করতে সহায়তা করতে অনেক কার্যকরী।

 


দাঁতের ব্যথার জন্য দারুচিনির ব্যবহারঃ যাঁরা দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁরা দারুচিনি খেতে পারেন। তুলো দিয়ে দাঁতে দারুচিনির তেল মাখুন। এটি স্বস্তি দেবে। দারুচিনির ৫-৬টি পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করুন। এতে দাঁত পরিষ্কার ও চকচকে হয়।

 



হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও অনেক উপকারী দারুচিনি। এটি মোট কোলেস্টেরল থেকে খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায় এবং ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরলকে স্থিতিশীল রাখে। এ ছাড়া রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও অনেক উপকারী।

 


বিভিন্ন মানব গবেষণায় দেখা গেছে যে, দারুচিনির অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রভাব রয়েছে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ১০ থেকে ২৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।

 


সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দারুচিনির ব্যবহারঃ পানিতে দারুচিনি পিষে, গরম করে পেস্ট হিসেবে লাগান। এটি ঠান্ডায় উপকারী। দারুচিনির রস বের করে মাথায় লাগালেও উপকার পাওয়া যায়।

 



আল্জ্হেইমার ও পারকিনসন রোগে উপকারী হিসেবে কাজ করতে পারে দারুচিনি। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ইঁদুরের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, দারুচিনি নিউরন রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা স্বাভাবিক করে।

 


ওজন কমাতে দারুচিনি খুবই কার্যকরী। পানিতে দারুচিনি ফুটিয়ে সেই পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করলে খুব দ্রুত ওজন কমানো যায়।
. যাদের ঘুমে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও দারুচিনি উপকারী। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে অবশ্যই ভালো ঘুম হবে।

 


পুষ্টিগুণে ভরপুর দারুচিনিতে রয়েছে প্রোসিয়ানিডিন যা চুলের ফলিকলকে উদ্দীপিত করে এবং দ্রুত বৃদ্ধি সহায়তা করে। এ ছাড়া দারুচিনি চুল পড়া কমাতে এবং টাক পড়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

 





দারুচিনির অপকারিতা

 


যেকোন কিছু যেমন কারো জন্য উপকারী, তবে তা থেকে সবাই উপকৃত হবে এমন নয়। এটি অন্য ব্যক্তিরও ক্ষতি করতে পারে। একইভাবে, দারুচিনিরও অপকারিতা রয়েছে, যা নিম্নরূপ:-

১. অতিরিক্ত পরিমাণে দারুচিনি খেলে মাথাব্যথা হতে পারে।
২. গর্ভবতী মহিলাদের দারুচিনি দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
৩. জরায়ুতে দারুচিনি রাখলেও গর্ভধারণ হয়।


অতএব, দারুচিনির অপকারিতা থেকে বাঁচতে, ব্যবহারের আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।




দারুচিনির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া


যে কোন খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। ঠিক তেমনই অতিরিক্ত দারুচিনি খেলে লিভারের সমস্যা হতে পারে। যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা রক্ত তরল করার ওষুধ নিয়মিত খান, তাদের বেশি মাত্রায় দারুচিনি না খাওয়াই ভালো।

 


দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম
দারুচিনি সাধারণত গরম মশলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে দারুচিনি গুঁড়ো করে সেটা বিভিন্ন খাবারে মিশিয়ে খাওয়া যায় কিংবা চায়ের সঙ্গেও দারুচিনি মিশিয়ে খাওয়া যায়। এতে দারুন উপকার রয়েছে।