পূর্ণাঙ্গ নামাজের নিয়ম, নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ, নামাজের নিয়মাবলী নিয়ত দোয়া ও ফজিলাত চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম, নামাজের ফরজ ওয়াজিব সুন্নত মুস্তাহাব সহ আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে— সে ইমামের অনুসরণেই পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। (আল-মাবসুত, সারাখসি : ১/২৪৩)
নামাজের নিয়মাবলী নিয়ত দোয়া ও ফজিলাত
সফর অবস্থায় নামাজ কসর করা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এসব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর পড়েছেন। আর মাগরিব, বিতর ও ফজরের নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে, এগুলোর কসর নেই।
আরও পড়ুন দোয়া মাসুরা বাংলা আরবি উচ্চারণ ও অর্থসহ ফজিলত
নামাজের সংক্ষিপ্ত নিয়মাবলী
- নিয়ত করতে হবে
- সানা পড়তে হবে
- সুরা ফাতেহা পড়তে হবে
- সূরা মিলাতে হবে
- রুকুতে যেতে হবে
- তাশাহুদ পড়তে হবে
- দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে
- এবং সালাম ফিরাই নামাজ শেষ করতে হবে
উপরের আলোচনা প্রতিটি নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তবে এ বিষয়ে স্থানীয় ইমামের নিকট থেকে আরো জেনে নিতে হবে
নামাজের নিয়ম অর্থ সহ
নামাযের বাহিরে ৭টি ফরজ। যে গুলোকে নামজের শর্ত বলা হয় ।
১। শরীর পবিত্র থাকা
২। কাপড় পবিত্র থাকা
৩। নামজের স্থান পবিত্র থাকা
৪। সতর ঢাকা
৫। কেবলামুখি হওয়া
৬। ওয়াক্ত হলে নামাজ পড়া
৭। নিয়ত করা
পূর্ণাঙ্গ নামাজের নিয়ম
*** নামাজের ভিতরের ছয়টি ফরজ। যেগুলোকে নামজের রোকন বলা হয়।
১। তাকবিরে তাহরিমা ( আল্লহু আকবার) বলা
২। কিয়াম করা
৩। কেরাত পড়া
৪। রুকু করা
৫। দুই সেজদা করা
৬। শেষ বৈঠকে তাহাহ্যুদ পড়ার সময় বসা
নামাজের নিয়ম
নামজের ওয়াজিবসমূহ:
১। তাকবিরে তাহরিমার সময় আল্লাহু আকবার বলা
২। সুরা ফাতেহা পড়া
৩। সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো
৪। ফজর নামজের প্রথম দুই রাকাত কেরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা
৫। কেরাতের পূর্বে সূরা ফাতেহা পড়া
৬। সূরা ফাতেহা একাধিকবার না পড়া
৭। যেহরী(উচ্চস্বরে কেরাত পড়া হয় এমন) নামজে উচ্চস্বরে কেরাত পড়া
৮। সিররী (অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়া হয় এমন) নামজে অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়া।
৯। নামাজের রোকনসমূহ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা
১০। রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো
১১। সেজদার মাঝে কপাল ও নাক জমিনের সাথে লাগিয়ে রাখা।
১২। প্রত্যেক রাকাতে এক সেজদার পর অপর সেজদা করা
।
১৩। উভয় সেজদার মাঝে বসা।
১৪। প্রথম বৈঠক করা (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে দুরাকাত পড়ার পর) ।
১৫। প্রথম বৈঠক ও শেষ বৈঠকে তাশাহ্যুদ পড়া।
১৬। প্রথম বৈঠকের পরে বিলম্ব না করে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো ।
১৭। নামজের ক্রিয়াসমূহের মাঝে তারতীব রক্ষা করা।
১৮। সালাম শব্দ দ্বারা নামাজ শেষ করা।
১৯। বেতের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
২০। দুই ঈদের নামজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা।
২১। দুই ঈদের নামজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর বলা।
কসর আদায় করা—
আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার এক ধরনের বড় সুবিধা। কসর করা মানে সংক্ষেপ করা। আর শরিয়াত নির্ধারিত দূরত্বে সফর করলে— তখন নামাজ সংক্ষেপ করাই ইসলামের বিধান।
কসর নামাজ পড়লে কল্যাণ লাভ হয়
নামাজ কখন কসর করতে হয়? এটা জেনে রাখা জরুরি। মূলত কসর নামাজ পড়তে হয় শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসাফির হলে। আর শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসাফির বলা হয়— কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে— নিজ শহর বা গ্রাম পেরিয়ে গেলেই সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)
মুসাফির ব্যক্তির নামাজ পড়ার নিয়ম হলো- তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত (কসর) পড়বেন। আর এইভাবে সংক্ষেপে নামাজ পড়ার ভেতর আল্লাহ তাআলা কল্যাণ রেখেছেন।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায়— কোনো আপত্তি নেই। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)
কসর যেভাবে নামাজ পড়বেন
মুসাফির চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ একাকী পড়লে বা মুসাফির ইমামের পেছনে আদায় করলে, কসর করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ পড়া ঠিক নয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর মুখে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)
আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত শুরু করে দেয় এবং প্রথম বৈঠক করে থাকে, তা হলে সিজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে, তা হলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও পড়তে হবে।(বাদায়েউস সানায়ি : ১/৯১)
সফরে সুন্নত নামাজ পড়ার বিধান
মুসাফির ব্যক্তির জন্য চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে— ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নত নামাজ আদায় করবে। (ইলাউস্ সুনান: ৭/১৯১; রাদ্দুল মুহতার : ১/৭৪২)
লক্ষণীয় যে, ভ্রমণে পূর্ণ নামাজের বদলে অর্ধেক পড়ার কারণে ধারণা হতে পারে যে, নামাজ বোধ হয়— পূর্ণ হলো না। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। কারণ, ভ্রমণে নামাজ কসর করা বা সংক্ষেপে আদায় করা— শরিয়তের বিধান ও নির্দেশ। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সুযোগও বটে। তাই এটা পালনেই সওয়াব, এর ব্যতিক্রম করা সম্পূর্ণ অনুচিত।