পায়খানা রাস্তায় গোটা , রোগ হলে সাধারণত পায়খানা করার সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ধারালো ব্যথা। অনেক সময় রোগীরা বলেন যে, পায়ুপথ দিয়ে ভাঙা কাচ বের হচ্ছে। মনীষীরা এই জীবন যাত্রার মানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এবং পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হওয়া রোগীদের জন্য এই ব্যথাটাই সব চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক এবং কষ্ট দায়ক হয়।
পায়খানা রাস্তায় গোটা
ব্যথার কারণে অনেকেই বাথরুমে যেতে ভয় পান। মল ত্যাগ করার পর সাধারণত কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত এই ব্যথা থাকতে পারে। মনে হয় যেন জায়গাটা খুব জ্বলছে। আর কী কী দেখা দিতে পারে? পায়খানার সাথে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত দেখা যেতে পারে। টয়লেট টিস্যুতে হয়তো দেখা যায় ছোপছোপ লাল রক্ত অথবা পায়খানার গায়ে রক্ত লেগে থাকে
ফিসার
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের সামনে অথবা পেছনে ফেটে গিয়ে ক্ষত তৈরি হলে তাকে ফিসার বলে। বাংলায় বলে ভগন্দর। এই সমস্যায় তীব্র বা মাঝারি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়।
মলত্যাগের সময় সামান্য রক্ত যায়। পায়ুপথ সরু হয়ে আসে। অনেক দিন ধরে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। প্রাথমিক অবস্থায় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, জিটিএন মলম ব্যবহার, পভিসেপ লোশন মেশানো কুসুম গরম পানিতে ছেঁক দিলে ভালো থাকা যায়।
পাইলস
চিকিৎসকেরা একে বলেন হেমোরয়েড। বাংলায় অর্শ। পাইলস ক্রমান্বয়ে আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নিচে নেমে আসে। পায়ুপথকে ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করলে ৩টা, ৭টা ও ১১টার কাঁটার জায়গায় তিনটি রক্তের শিরা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে চাপ খেয়ে ফুলে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে। এর পাঁচটি পর্যায় আছে।
মনীষীরা এই জীবন যাত্রার মানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এবং পাইলস ব্যথাহীন হলেও প্রচুর রক্তপাত হতে পারে।
প্রথম পর্যায়ের পাইলস খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, মল নরম করার ওষুধ এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ দিয়ে সারানো সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায়ের পাইলসে ব্যান্ড লাইগেশন খুবই কার্যকরী অস্ত্রোপচার। তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রার পাইলসে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাইলসগুলো কেটে ফেলা হয়।
ডাক্তাররা একে নাম দিয়েছেন sentinel piles. অনেক দিন ধরে যারা এনেল ফিসার (anal fissure) এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাদের ঐ রকম একটা দানা বা নডুল ফিল হয়।
ফিসার healed হয়ে যাওয়ার পর ওটা থেকেই যায়, তবে কোনো ক্ষতি করে না!মলদ্বারের মুখে পাহারাদার এর মত স্থিত হওয়ার জন্য মনে হয় sentinel নামটি দেওয়া হয়েছে! হয়তো ফিসার এর জায়গায় কোনো exterior অনভিপ্রেত আক্রমণ প্রতিরোধ করতেও সক্ষম
ফোড়া বা এবসেস
পায়ুপথের ভেতরে ও বাইরে ছোট-বড় নানা ধরনের ফোড়া হতে পারে। ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারণ। অস্ত্রোপচার না করলে এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরে ফিস্টুলা হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি।
ফিস্টুলা
ফিস্টুলা হলো একটি ঘা, যার একটি মুখ পায়ুপথের বাইরে, অপরটি ভেতরে থাকে। ফোড়া হওয়ার কারণে এটি হয়। এরও চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। তবে নালির ভেতরের মুখ যদি খুব ওপরে হয় বা আঁকাবাঁকা হয়, তবে অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হতে পারে। কাজেই অস্ত্রোপচারের আগে ফিস্টুলোগ্রাম, এমআরআই করে নেওয়া ভালো।
তাহলে পাইলসের সমস্যাটা আসলে কি?
আমরা যখন পায়খানা করতে কমোডে বা টয়লেটে বসি তখন অনেক সময় পায়খানা আনতে কোত দিয়ে চাপ আনি। জোর করে পায়খানা বের করতে চেষ্টা করি। কোষ্ঠ কাঠিন্যের রোগীরা খুব বেশি জোরে চাপ দেয়। তবুও পায়খানা আসে না।
অনেক জোরে কোত দেয়ার কারনে পায়ুপথের এসব শিরা উপশিরাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সময়ের সাথে সাথে ফুলে গিয়ে এই শিরাগুলোর মধ্যে প্রদাহ হয়, শিরাগুলো লালচে বা কালচে হয়ে যায় বেশি চাপের কারনে। তখন সেটা ফুলে যায়। মনে হয় যেনো ফুলা মাংসপিন্ড। আসলে এটা সেই প্রয়োজনীয় শিরা উপশিরাগুলোই ফুলে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে। এটাকেই আমরা পাইলস বলি।
প্রোলাপস
পায়ুপথ দিয়ে অনেক সময় বৃহদন্ত্রের কোনো অংশ আংশিক বা পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে। একে প্রোলাপস বলে। ল্যাপারোসকপি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়।
হেমাটোমা
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের রক্তনালি ফেটে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কখনো কখনো প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।
(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)