প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে কি বুঝায় , ধারণত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে আমরা প্রদেশের স্বাধীনতাকে বুঝে থাকি। প্রকৃতপক্ষে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন হলো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে নিজস্ব সম্পদ বণ্টন, রাজস্ব সংগ্রহ ও শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নিজস্ব এখতিয়ার ভোগ করা।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন হল একটি পদক্ষেপ যার মাধ্যমে সরকার স্থানীয় স্তরে প্রশাসন করে যা ব্যক্তিগত এবং স্থানীয় সমস্যার সমাধানে লক্ষ্য করে। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনে স্থানীয় সমাজ এবং স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে কি বুঝায়
এটি স্থানীয় সমস্যার বিষয়ে সরকারের নিকটস্থ হয় এবং প্রশাসনের দায়িত্ব এই স্থানীয় সমস্যার সমাধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট প্রদান করা। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনে নির্দিষ্ট সেট অফ বিধিমালা এবং আইন বিধি অনুসরণ করতে হয়।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে লোকজন স্বশাসন এবং সরকারের মধ্যে একটি সমন্বয় সৃষ্টি করে তুলতে পারে এবং স্থানীয় সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের সহায়তা পাওয়া যায়।
১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ বাংলার নবাব থেকে দেওয়ানি সনদ প্রাপ্ত হলে যে শাসন প্রণালীর উদ্ভব হয়, তা ইতিহাসে দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত। মীর জাফরের মৃত্যুর পর লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলোমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। এ সময় কিছু শর্ত সাপেক্ষে মীরজাফরের পুত্র নাজিম উদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসানো হয়।
শর্ত মোতাবেক নাজিম-উদ-দৌলা তাঁর পিতা মীর জাফরের ন্যায় ইংরেজদের বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করার সুযোগ দেবেন এবং দেশীয় বণিকদের অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা বাতিল করবেন। এই ব্যবস্থার ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠে এবং বাংলার নবাব সামান্য বৃত্তিভোগী কর্মচারীতে পরিণত হন। ১৭৭২ সালে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক বাতিল হয়।
সুশাসনের ধারণা (Concept of Good Governance)
সাধারণত শাসন হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ও তা বাস্তবায়নের একটি প্রক্রিয়া। শাসনের ধারণা কোন নতুন বিষয় নয় বরং এটা মানব সভ্যতার মতোই পুরাতন। শাসন ব্যবস্থার অর্থ ও মাত্রা সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আলোচনা ও বিতর্ক রয়েছে।
সুশাসন শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন: আন্তর্জাতিক শাসন, জাতীয় শাসন, স্থানীয় শাসন, যৌথশাসন ইত্যাদি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। বর্তমানে সুশাসনকে একটি দেশের উন্নয়নের দিক নির্দেশনা প্রদানকারী হিসেবে দেখা হয়।শাসন বলতে বুঝায় ক্ষমতাকে কিভাবে প্রয়োগ করা হয়, কিভাবে জনগণের দাবি-দাওয়ার প্রতি সাড়া প্রদান করা হয় কিংবা কিভাবে একটি জনসমষ্টি শাসিত ও পরিচালিত হয়।
সাধারণ অর্থে সুশাসন হলো এমন এক প্রক্রিয়া যা একটি দেশের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এই শাসন প্রক্রিয়ায় জনগণের আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে নিশ্চিত হয় সামাজিক ন্যায় বিচার ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ। সুশাসনের মূল ভিত্তি হলো মূল্যবোধ।
সুশাসনের ধারণাটি বহুমাত্রিক।
রাজনৈতিক সুশাসন
সামাজিক সুশাসন
অর্থনৈতিক সুশাসন
সাংস্কৃতিক সুশাসন
তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়ন ও শাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সরকারের জবাবদিহিতা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্নীতি দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন সব ক্ষেত্রেই সুশাসন জরুরি। তৃতীয় বিশ্বে সুশাসনের সমস্যাকে সব সমস্যার মূল কারণ হিসাবে সনাক্ত করেছে দাতারা।
তাদের মতে, এসব রাষ্ট্রে সম্পদের স্বল্পতা রয়েছে। তবে এর থেকেও বড় সমস্যা হলো সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। একটি বহুমুখী ধারণা হিসাবে (multi-dimensional) সুশাসনের উদ্ভব হয় মূলত ১৯৮৯ সালে। বিশ্বব্যাংক প্রথম এই ধারণা উপস্থাপন করে। ‘সবুজ বিপ্লব’ আর ‘কাঠামো সমন্বয় কর্মসূচি’র ব্যর্থতার পর বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF) উন্নয়নের শর্ত হিসাবে এ ধারণার অবতারণা করে।
মোটা দাগে সুশাসনের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ হল
রাজনৈতিক: গণতন্ত্র ও সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
অর্থনৈতিক: মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বেসরকারিকরণ
সামাজিক-সংস্কৃতিক: পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রসার এবং
তথ্য ও প্রযুক্তি: বিশ্বজুড়ে তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার।
সুশাসনের সংজ্ঞা: সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Good Governance’। এখানে Governance শব্দটি গ্রিক ভার্ব kubernaein [kubernáo] থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, সুশাসন হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ সমাজের সমস্যা ও চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়।
জাতিসংঘ মতে সুশাসনঃ
১৯৯৭ সালে ইউএনডিপি (United Nations Development Program – UNDP) সুশাসনের ৯ টি প্রধান বা মূল উপদানের কথা বলেছে। এগুলো হলো-
১. অংশীদারত্ব (Perticipation)
২. আইনের শাসন (Rule of Law)- সমতা ও ন্যায্যতা
৩. স্বচ্ছতা (Transparency)
৪. সংবেদনশীলতা (Responsiveness)
৫. জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা (Consensus orientation)
৬. সাম্য (Equity)
৭. কার্যকরীতা ও দক্ষতা (Effectiveness and Efficiency)
৮. দায়বদ্ধতা (Accountability )
৯. কৌশলগত লক্ষ্য (Strategic Vision)