ফরজ গোসলের দোয়া । ফরজ গোসলের নিয়ত। ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত দোয়া ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়। ফরজ গোসল কিভাবে করতে হয়। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে
আর রমযানে সুবহে সাদেকের পুর্ব পর্যন্ত খানাপীনা, স্ত্রী-সহবাস সবকিছু বৈধ। যদিও সাহরী খাওয়ার পর হয়। তবে অবশ্যই নামাযের আগে গোসল করে যথাসময়ে নামায আদায় করতে হবে ৷
ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত দোয়া ইসলামের আলোকে
বিসমিল্লা-হ’ বলে গোসল শুরু করা। দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোওয়া (বুখারী-২৪৮)।পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিস্কার করা (বুখারী-২৫৭)। বাম হাতটি ভালোভাবে ঘষে ধুয়ে নেওয়া (বুখারী-২৬৬)। নামাজের ওজুর মতো ভালোভাবে পূর্ণরূপে ওজু করা। এক্ষেত্রে শুধু পা দুটো বাকি রাখলেও চলবে,যা গোসলের শেষে ধুয়ে ফেলতে হবে। (বুখারী-২৫৭,২৫৯,২৬৫)।
রাসূল (সাঃ ) এভাবে গোসল শেষ কর তেন এবং গোসল শেষে রুমাল ব্যবহা রের পরিবর্তে শরীর মোবা রক থেকে পানি নিঃ শেষে ঝেড়ে নিতেন । অাবা র কখনও রুমাল দ্বারা মুছে নিতেন ।
আল্লাহ আমাদের সঠিক ভাবে কুর’ আন ও সহিহ সুন্নাহ মেনে চলার তাও ফিক দান করেন ।
ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত
ঈমানদারকে সবসময় শারীরিক পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। অজুর পাশাপাশি তাকে সময়-সুযোগ ও সুবিধা-আবশ্যিকতা অনুপাতে গোসলও করতে হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) অপবিত্র দূর করার জন্য গোসল করার তাগিদ দিয়েছেন। গোসলের তিনটি ফরজ ও ছয়টি সুন্নত রয়েছে। মুমিনরা এগুলো একনিষ্ঠভাবে পালন করেন। যথাযথভাবে এসব ফরজ পালন না করলে— ফরজ গোসল ঠিকমতো হয় না। এতে গোসলকারী অপবিত্র থেকে যায়।
আরও পড়ুন জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস।কুরআন হাদিসের আলোকে
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
দোয়া কুনুত বাংলা আরবি উচ্চারণ ও অর্থসহ ফজিলত উচ্চারণ
যে সব কারণে গোসল ফরজ হয়ঃ
.(১) স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
(২). নারী ও পুরুষ মিলনে হই ( সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক ) ।
(৩). মেয়েদের হায়েয হলে ।
(৪) নেফাস অর্থাৎ সন্তান প্র সবের পর যে রক্ত ক্ষরন হলে ।
(৫) ইসলাম গ্রহন করলে(নব মুসলিম হলে)।
উপরোক্ত তিনটি কাজ করলেই গোসল হয়ে যাবে । তবে নিম্নে বর্ণিত সুন্নাত তরিকায় গোসল করলে গোসল পরিপূর্ণ হবে এবং তা এবাদতের মধ্যে গণ্য হবে ।
.
গোসল করার সুন্নাত তরীকা ।
(১) গোস লের শুরু তে বিসমিল্লা হির রহ মানির রা হীম পড়া ।
(২) পবিত্র তা অর্জ নের জন্য গোসল করছি মনে মনে এ নিয়ত করা ।
.(৩). প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। ( বুখারী শরীফ ) ।
.(৪) অতঃ পর ডান হাতে পানি নিয়ে নাপা কীর স্থান তথা লজ্জা স্থান বাম হাত দিয়া তিন বার ধুতে হবে ।. শরী রের অন্য কোন জায় গায় বীর্য বা নাপা কি লেগে থাক লে সেটা ও ধুতে হবে । ( মুসলিম ) ।
.
(৫). এবার বাম হাত কে ভালো করে ধুই য়ে ফেল তে হবে ।
.
(৬) এবার অামরা যেভাবে ওজু করি সেভাবে অযু করতে হবে । ( মা’য়ারিফুল হাদিস) ।
(৭) ওজু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হবে। ( বুখারী) ।
(৮) অতঃপর ডান কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে । ( শামী ) ।
(৯) তারপরে বাম কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে ( শামী) । অতঃপর ডলে ডলে সমস্ত শরীতে পানি পৌছাতে হবে যাতে শরীরের কোন লোমই শুকনা না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি পৌঁছাতে হবে ।
পুরু ষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলা দের চুল ভালো ভাবে ভিজ তে হবে ।
এই নিয় মে গোস লের পর নতুন করে আর ওজুর দর কার নাই, যদি ওজু না ভাঙ্গে ।
গোসলের ফরজগুলো হলো—
গোসলের ফরজ তটিঃ
(১) গড় গড়ার সাথে কুলি করা ( যদি রোজাদার না হয়)।
(২) নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত
পানি পৌছানো ।
(৩) সমস্ত শরীর ভালভাবে
পানি দ্বারা ধৌত করা ।
গড়গড়াসহ কুলি করা
গোসলের প্রথম ফরজ হলো- গড়গড়াসহ কুলি করা। মুখের ভেতর অনেক সময় খাবারের উচ্ছিষ্ট জমে থাকে। গলার ভেতরেও কফ জমে থাকে। তাই গড়গড়াসহ কুলি করলে গলার কফ ও মুখের ভেতর জমে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ফরজ গোসলের অংশ হিসেবে কুলি করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৭ ও ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)
নাকে পানি দেওয়া
গোসলের আরেকটি ফরজ হলো- নাকের ভেতর পানি দেওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নাকে পানি দিয়েছেন। এ সম্পর্কিত একাধিক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৬)
সারা শরীরে পানি দেওয়া
এমনভাবে গোসল করতে হবে— যাতে শরীরের কোনো অঙ্গ শুকনো না থাকে। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন গোসল করতেন, তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকতো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭)
গোসল কখন ফরজ?
পাঁচটি কারণে গোসল ফরজ হয়। কারণ গুলো হলো-
১. স্বামী- স্ত্রী সহ বাস করলে কিংবা পুরুষের স্বপ্ন দোষ হলে
২. নারীদের ঋতু স্রাব অথবা পিরিয়ড হলে।
৩. সন্তান প্রস বের পর রক্ত পাত বন্ধ হলে।
৪. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য।
৫. কোনো অমু সলিম ইসলাম গ্রহণ করলে ।
গোসলের সুন্নত ছয়টি
১. গোসল শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা।
২. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
৩. দুই হা তের কব্জি ওযুর মতো তিন বার পরিষ্কার করা ।
৪. কাপড় অথবা শরীরের কোথাও অপবিত্র কোনো কিছু থাকলে— গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা।
৫. গোসলের আগে অজু করা। গোসলের স্থান নিচু হলে ও পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে টাখনুসহ দুই পা পরে পরিষ্কার করা।
৬. ডান দিকে তিন বার , বাম দিকে তিন বার ও মা থার ওপর তিন বার পানি প্রবা হিত করা ।
গোসল কখন সুন্নত?
চারটি কারণে গোসল সুন্নত। কারণগুলো হলো-
১. জুমার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
২. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজ হার নামা জের আগে গোসল করা সুন্নত ।
৩. ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত।
৪. হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সময় গোসল করা সুন্নত।
ফরজ গোসলের আগে সাহরি খাওয়া যাবে কি ?
কোনো ব্যাক্তির ওপর যদি গোসল ফরজ হয়, আর সে গোসল করা ছাড়া সাহরি খায়, তাহলে তার রোজার কোনো সমস্যা হবে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) জুনুবি (গোসল ফরজ) অবস্থায় সাহরি গ্রহণ করেছেন বলে একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
এ ছাড়া এটাও প্রমাণিত যে, সাহরি খাওয়ার আগে তিনি অজু করে নিতেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে— গোসল ফরজ অবস্থায় সেহরি খেলে ফজর নামাজের আগে অবশ্যই গোস লের মাধ্যমেই পবিত্রতা অর্জন করে নিতেই হবে ।
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে যে, ‘রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়াই অপবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে নাপাক অবস্থায়) রাসুল (সা.)-এর ফজর হয়ে যেত। অতঃপর তিনি গোসল করে রোজা রাখতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮২৯; মুসলিম, হাদিস : ১১০৯)
রাসুল (সা.)-এর অন্য একজন স্ত্রী ও উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন যে, ‘সহবাসের ফলে নাপাকি অবস্থায় রাসুল (সা.) ফজর করে ফেলতেন। অতঃপর গোসল করে রোজা রাখতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯২৬)
আর রোজা রাখা অবস্থায় ফরজ গোসল করার নিয়ম অন্য সময়ের নিয়মের মতোই। তবে রোজা অবস্থায় গোসল করার সময় গড়গড় করে কুলি করা যাবে না। বরং এমনিতেই তিন বার কুলি করবে। এছাড়া নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছাবে না। কারণ, গড়গড় করে কুলি করলে ও নাকের নরম জায়গায় পানি দিলে— কণ্ঠনালিতে পানি চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, আর এতে রোজা ভেঙে যাবে।