বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় , বর্তমান বাজার অনুযায়ী যার কাছে ৭০ থেকে ৭৩ হাজার টাকা আছে, তাকেই জাকাত দিতে হবে। তবে, এটা নির্ভর করে আপনার রুপার মূল্যের ওপর। রুপার মূল্য যদি বেশি থাকে, তাহলে আরেকটু বেশি। ৫৮৫ গ্রাম রুপার মূল্যের সমান অর্থ থাকলে জাকাত দিতে হবে। না হলে দিতে হবে না। এখন আপনার সে মূল্য দেখতে হবে। তবে, আমাদের হিসাব অনুযায়ী সেটা ৭০ থেকে ৭৩ হাজার টাকা হবে।
যাকাত কি?
ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি। ঈমান,নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত। যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকবে তাকে যাকাত দিতে হবে।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা। যে ব্যাক্তি এই সম্পদের মালিক হবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
কোরআনে বর্ণিত জাকাতের অন্যতম একটি খাত হলো ইসলামের সেবা। তাই যে সব ব্যক্তি নিজেদের জীবন ইসলামের সেবায় সদা নিয়োজিত রেখেছেন, এলমে দ্বীন শিখা ও শিখানোর কাজে, ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিজের জীবনের বেশি সময় ব্যয় করছেন, তাদের মধ্যে যারা জাকাত গ্রহণযোগ্য জাকাতের উল্লেখযোগ্য একটি বড় অংশ তাদের মাঝেও বিলি করুন।
যাকাতের গুরুত্ব
ধনী ব্যাক্তিদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। কারণ ধনী ব্যাক্তিদের কাছে অনেক সম্পদ থাকবে আর প্রতিবেশী না খেয়ে থাকবে তা ইসলাম মেনে নেয় না।
তাই ধনী ব্যাক্তিদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। যাকাত ছাড়া ইসলামের দিন পূর্ণতা লাভ করে না, কারণ ইসলাম হলো সামঞ্জস্য ও পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
যে ব্যাক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে তাকে যাকাত দিতে হবে ও হজ্জ পালন করতে হবে। সূরা বাকারার ৪৩ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় করো ও রুকু কর রুকুদারীদের সাথে।
যেসব সম্পদে জাকাত ফরজ-
* সোনা-রুপা
* ব্যাংকে সঞ্চয়কৃত টাকা
* ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, শেয়ার
* হজ, ঘরবাড়ি ও বিয়ের জন্য জমানো অর্থ
* ব্যবসার নিয়তে ক্রয়কৃত জিনিস
* দোকানপাটের বাণিজ্যিক পণ্য
* দোকানের বিক্রি করার জন্য রাখা পণ্য
* ব্যবসায়িক ভূমি বা প্লট
* বসবাস বা এমনিতে ক্রয়কৃত প্লট
* বার্ষিক বাড়ি ভাড়া যদি সার্বিক খরচের অতিরিক্ত হয়ে জাকাতের নেসাব পরিমাণ হয়
যাকাত ফরজের শর্ত কয়টি?
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তটি পাঁচটি। শর্ত গুলো হলোঃ
নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ ১ বছর নিজের কাছে থাকলে। সেই সম্পদ চন্দ্র বছর হতে হবে।
সম্পদের মালিক নিজেকে হতে হবে।
সেই সম্পদ হতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত।
যার বেশি পরিমাণ ঋণ না থাকে।
জাকাত হিসাব করার পদ্ধতি
বছরের একটা সময় দিন-তারিখ নির্ধারণ করে দোকানে বিদ্যমান পণ্যের মূল্যের হিসাব করে দেখা গেল, পাঁচ লাখ টাকার পণ্য আছে। অতঃপর ওই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আবার আনুমানিক পণ্যের মূল্য ধরে দেখা গেল, শুরুতে যে পরিমাণ সম্পদ ছিল, তা নেসাব পরিমাণ। আবার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যে পণ্য আছে, তাও নেসাব পরিমাণ, তাহলে সমুদয় সম্পদের আড়াই শতাংশ জাকাত দিতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ৩/১৮২)।
ব্যবসায়িক স্বর্ণ অর্থাৎ যে স্বর্ণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে সে স্বর্ণের যাকাত ফরয এবং হারাম কাজে ব্যবহৃত স্বর্ণ যেমন পুরুষের ব্যবহৃত স্বর্ণ এবং কোন প্রাণীর আকৃতিতে বানানো নারীর অলংকার যা ব্যবহার করা হারাম, এরূপ ব্যবহৃত স্বর্ণেরও যাকাত ফরজ।
এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। কারণ স্বর্ণের এরূপ ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। পক্ষান্তরে বৈধ পন্থায় নারীর ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত ফরয কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে ছহীহ মত হল, নারীর ব্যবহৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলংকারের যাকাত ফরয। নারীর ব্যবহার্য অলংকারের যাকাত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক মহিলা তার কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দুটি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বললেন, না।
তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি পছন্দ কর যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিধান করান? রাবী বলেন, একথা শুনে মেয়েটি তার হাত থেকে তা খুলে নবী (ছাঃ)-এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য।
আবু দাউদ হা/১৫৬৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘গচ্ছিত সম্পদ ও অলংকারের যাকাত’ অনুচ্ছেদ, সনদ হাসান।]
]
যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যিক পণ্যের মধ্যে কোনোটি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এই পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সব সম্পদ হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭০৮১)।
(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)