বায়তুল হিকমা কি , বাইতুল হিকমাহ (আরবি: بيت الحكمة; Bayt al-Hikma) ছিল আব্বাসীয় আমলে ইরাকের বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত একটি গ্রন্থাগার, অনুবাদকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।ইসলামিক টিপস এটিকে ইসলামি স্বর্ণযুগের একটি প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বায়তুল হিকমা কি
খলিফা হারুন-অর-রশিদ আব্বাসীয় রাজধানী বাগদাদে এটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার পুত্র খলিফা আল-মামুন ৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে সেটির পূর্ণতা দান করেন।ইসলামিক টিপস, সিরিয়ান খ্রিষ্টান হুনায়ন ইবনে ইসহাককে বায়তুল হিকমার মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তত্কালীন মুসলিম সভ্যতার রাজধানী বাগদাদ ছিল পৃথিবীর শিক্ষা ও সংস্কৃতির লালনক্ষেত্র। আব্বাসীয় খলিফা আল মুনসুর সে সময় বইয়ের প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট ছিলেন এবং বই সংগ্রহ করতেন।
বায়তুল হিকমার প্রতিষ্ঠা:
আব্বাসীয় খলীফা আল মানসূর (758-775 খৃ.) জ্ঞান চর্চা, বুদ্ধিবৃত্তি, কৃষ্টি ও সভ্যতার যে বীজ বপন করেন, তা তাঁর উত্তরসূরী হারূন অর রশীদের (786-809 খৃ) প্রযত্নে অঙ্কুরিত হয়ে বৃদ্ধি পায় এবং পরিশেষে মামুনের আমলে সুস্বাদু ও সুবৃহৎ ফলভারে নত মহীরুহরূপে পরিণত হয়। ইসলামিক টিপস, মামুন গ্রীক জ্ঞান ভান্ডার হতে উপকরন
আহরনের জন্য ইবন মাসাওয়া এবং হুনাইন ইবনে ইসহাকের নেতৃত্বে কনস্টান্টিনোপল ও সিসিলি হতে আহরিত পান্ডুলিপি এবং এটি ছাড়াও সংস্কৃত, পারস্য, ভারতীয়, ও সিরিয়ান ভাষায় লিখিত পুস্তকাদি অনুবাদ করার জন্য 830 খৃস্টাব্দে বাগদাদে ”বায়তুল হিকমা” বা জ্ঞানগৃহ নামে একটি অদ্বিতীয় গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন।ইসলামিক টিপস, এই জগৎ বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটিতে তিনটি ভাগ ছিল। যথা- (ক) গ্রন্থাগার (খ) শিক্ষায়তন (গ) অনুবাদ ব্যুরো।
অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সাড়া জাগানো ও প্রভাবশালী জ্ঞানচর্চাকেন্দ্র বায়তুল হিকমা,ইসলামিক টিপস, যাকে হাউজ অব উইজডম বা জ্ঞানের ভান্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।ইসলামিক টিপস, অনুবাদকেন্দ্র হিসেবে যাত্রাপথ শুরু হলেও ক্রমেই তা গবেষণাকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানমন্দিরে পরিণত হয়েছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আব্বাসীয় শাসনামলে।
জ্ঞান বিজ্ঞান বিকাশ বায়তুল হিকমার অবদান:
আব্বাসীয় জ্ঞান বিজ্ঞান বিকাশে খলীফা আল মামুনের অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি 830 খৃস্টাব্দে বায়তুল হিকমা নামক জ্ঞানাগার নির্মাণ করেন। ইসলামিক টিপস , আব্বাসীয় আমলে জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশে বায়দুল হিকমার ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হল:
শিক্ষার সম্প্রসারন: আব্বাসীয় খলিফা মামুনের দৃস্টিতে শিক্ষা ছিল এমন একটি ভিত্তি যার উপর মানবাত্নার শান্তি নিহিত। তাই তিনি রাজ্য জয় অপেক্ষা সৃজনশীল সাংস্কৃতিক বিজয়কে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
সাংস্কৃতিক চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য তিনি বায়তুল হিকমাকে কেদ্রস্থল হিসেবে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও মকতব প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামিক টিপস , এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রচুর লাখারাজ সম্পত্তি নিয়োজিত করেন।
2) কাগজ উৎপাদন: শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারের জন্য এবং বায়তুল হিকমার অনুবাদ কার্যাবলীকে নির্বিগ্ন করার জন্য মামুন চীনাদের অনুকরনে কাগজের কল প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় প্রচুর কাগজ উৎপাদনের ফলেই শিক্ষা দীক্ষার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। উল্লেখ্য যে, হিজরীর তৃতীয় শতকে কিছু চীনা কাগজ ইরাকে আমদানী হয়।
খলিফা মামুনের সময়ই সারা বিশ্বে বায়তুল হিকমার খ্যাতি অগ্নিদীপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বের বিদ্বান ব্যক্তিদের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে এটি পরিচিতি লাভ করে। ইসলামিক টিপস , নারী-পুরুষনির্বিশেষে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জাতির পণ্ডিতদের সম্মেলন ঘটেছিল এই প্রতিষ্ঠানে।
মামুনের সময় বায়তুল হিকমার তিনটি বিভাগ ছিল। যথা :ক. গ্রন্থাগার খ. শিক্ষায়তন এবং গ. অনুবাদকেন্দ্র। জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার এই বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্রে বহু অনুবাদক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিবর্গের সমাগম ঘটেছিল।
পান্ডুলিপি সংগ্রহ: ঐতিহাসিক আমীর আলী মামুনের রাজত্বকালকে ইসলামের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উজ্জল ও গৌরবময় যুগ বলে যে মন্তব্য করেছেন তার মূল কারন হল বায়তুল হিকমার অবদান।
বায়তুল হিকমায় গবেষনারত পারসিক, হিন্দু, গ্রীক, খৃস্টান, আরবীয় প্রভৃতি সম্প্রদাযের মনীষীদের মাধ্যমে আরবের বিভিন্ন অঞ্চল ও বৈদেশিক রাজ্য হতে নানা দেশের জ্ঞান ভান্ডারে সঞ্চিত পুস্তকের পান্ডলিপি আহরণ করেন।
অনুবাদ কার্যাবলী: মামুনের দরবারের উজ্জল রত্ন লব্ধ প্রতিষ্ঠা অনুবাদক হুসাইন ইবনে ইসহাক ছিলেন বায়তুল হিকমার মহাপরিচালক। ইসলামিক টিপস , তাঁর নেতৃত্বে এখানে অনুবাদ কার্যাবলী চলত বিরামহীনভাবে। তিনি নিজে গ্রীক ভাষার শিক্ষা লাভ করে গ্রীক অঞ্চল হতে পান্ডুলিপি উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত হন এবং এসব আরবিতে অনুবাদ করেন।
এছাড়া বায়তুল হিকমার অন্যান্য অনুবাদকগন Galen, Pual, Euclid, Ptolemy প্রমূখ মনীষীরা বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাবলি এবং বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল এবং প্লেটোর মূল্যবান গ্রন্থাদি আরব ভাষায় অনুবাদ করেন।ইসলামিক টিপস , ইসলামিক টিপস , এ সময় লিউকের পুত্র কোস্টার এর মাধ্যমে গ্রীক সিরিয়া ও ক্যালডিয় ভাষার গ্রন্থাদি, মানকাহ এবং দাবান নামক ব্রাহ্মন মনীষীদের দ্বারা সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার গ্রন্থাদি আরবিতে অনুবাদ করা হয়।
(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)