রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত

আজকে আমরা রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ আরবি অর্থ নিয়ত ইফতারের দোয়া ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, রোজার গুরুত্ব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদেরকে যা জানিয়েছেন সেগুলো।

 

আরবী উচ্চারণ ও রোজার নিয়তঃ—

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

আরবি নিয়ত ও বাংলা উচ্চারণঃ

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত

রোজা রাখার নিয়তঃ—-

উচ্চারণ- নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম ।

 

অর্থ – হে আল্লাহ ! আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসে তোমার পক্ষ হতে ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম আমি , অতএব হে আল্লাহ আমার পক্ষ হতে তা কবুল কর । নিশ্চয়ই তুমি আমাদের সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

 

ইফতারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ এবং পরে নিম্নোক্ত দুআটি পড়া সুন্নত:

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

উচ্চারণ: যাহাবায যামাউ ওয়াব তাল্লাতিল উরূক্বু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।

অর্থ: আমার পিপিসা মিটে গেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে আর পুরস্কারটা আমি অবশ্যই পাবো যদি আল্লাহ চান। [সুনান আবু দাউদ, খন্ড ২, বুক অফ ফাস্টিং হাদিস ২৩৫০]

 

আরো পড়ুনঃ              সুরা কাফিরুন বাংলা আরবি উচ্চারণ ও অর্থসহ ফজিলত

জুম্মার নামাজের নিয়ত কুরআন হাদিছের আলোকে

রোজার বাংলা নিয়তঃ—

হে আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল আমি রমাদ্বান শরীফের ফরজ রোযা রাখার নিয়ত করছি । আমার তরফ থেকে আপনি নিশ্চয় কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত ।
রমজান শুরু হলে অনেকেই রোজার নিয়ত নিয়ে চিন্তিত থাকেন ।

অনেকে মনে করেন, রোজার নিয়ত মুখে করতে হয়। সমাজে যে আরবী নিয়ত প্রচলিত আছে তা বলতে হয়, নইলে কমপক্ষে
আমাদের মুখে এতটুকু বলতে হয় যে , আমি আগামীকাল থেকে রোজা রাখার নিয়ত করছি ।

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত

এমন ধারণা সঠিক নয়। কারণ রোজার জন্য মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়; বরং অন্তরে রোজার সংকল্প করাই যথেষ্ট। এমনকি রোজার উদ্দেশ্যে সাহারী খেলেই রোজার নিয়ত হয়ে যায়। সুতরাং এ কথার কোন সুযোগ নেই যে মুখে রোজার নিয়ত না করলে রোজা হবে না।

 

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত

রোজার কিছু আলোচনাঃ-

নিয়তঃ-

* রমজান এর রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত ব্যতীত সারাদিন পানাহারআ বা যৌনতৃপ্তি থেকে বিরত থাকলে ও রোযা হবে না।

* আমাদের মুখে নিয়ত করা জরুরী নয় । আমাদের অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে , তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম । মুখে নিয়ত করলেও আরবীতে হওয়া জরুরী নয়- যে কোন ভাষায় নিয়ত করা যায়।
বাংলায় : ‘আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম।’

সেহরিঃ-
* সেহরি খাওয়া জরুরী নয় তবে সেহরি খাওয়া সুন্নত। অনেক ফজিলতের আমল। ক্ষুধা না লাগলে বা খেতে ইচ্ছে না করলেও সেহরির ফজিলত লাভের নিয়তে যা-ই হোক কিছু পানাহার করে নেয়া উত্তম।

* নিদ্রার কারণে আমাদের সেহরি খেতে না পারলেও রোজা রাখতেয় হবে ।
* বিলম্বে সেহরি খাওয়া উত্তম।

ইফতার :-
* পশ্চিমে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর পর্যন্ত বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা মুস্তাহাব।
* বিলম্বে ইফতার করা মাকরূহ।
* সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরই ইফতার করতে হবে।

* সবচেয়ে উত্তম হলো খেজুর দ্বারা ইফতার করা।
* ইফতার করার পূর্বে দোয়া পড়া মুস্তাহাব।
* ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়।

কুরআন তেলাওয়াতঃ-

* রমজান মাসের একটি বিশেষ আমল হল কোরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে অধিক পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন ।

* ৪টি কাজ বেশি বেশি করাঃ

১)কালিমা পড়া।

২) ইসতেগফার করা

৩) জান্নাত প্রাপ্তির দোয়া করা
৪) জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা।

ও আল্লাহ পরওয়ার দিগার আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন।।

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত

হাদিসে আছে, প্রতিটি আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিয়তবিহীন কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে না, তা দ্বারা দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। তাই প্রতিটি আমল শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত নিয়ত। অন্য সব ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ।

রমজান মাসের প্রতিটি রোজা যেহেতু পৃথক পৃথক একেকটি আমল সেহেতু রমজানের প্রতিদিনের রোজার জন্যও পৃথক পৃথক নিয়ত শর্ত।

মনের স্থির সংকল্পকে নিয়ত বলে। নিয়ত করতে হয় মনে মনে। মনের সংকল্পবিহীন নিছক মুখে কিছু আবৃত্তি করার নাম নিয়ত নয়। তবে মনের সংকল্প স্থির হওয়ার পর তা মুখেও বলা যেতে পারে।

রোজার নিয়ত নামে যে আরবি গদ সমাজে প্রচলিত আছে তা হাদিসে বর্ণিত হয়নি। এমনকি ফিকহের প্রাচীন প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীতেও এ বাক্যের কোনো অস্তিত্ব নেই। অতএব, উক্ত আরবি বাক্যগুলো বলার মধ্যে বাড়তি কোনো সওয়াব ও ফজিলত নেই।

রমজানের রোজার নিয়ত করার শুরুর সময় হলো আগের দিনের সূর্যাস্ত। অর্থাৎ রোববারের রোজার নিয়ত করা যাবে শনিবারের সূর্যাস্তের পর থেকে। শনিবারের সূর্যাস্তের পূর্বের নিয়ত রোববারের রোজার জন্য যথেষ্ট হবে না।

রোজার নিয়ত আরবিতে করা জরুরী??

আমাদের মাঝে একটা ভুল প্রচলিত আছে। যেটাকে আমরা অনেক জরুরি মনে করি। মনে করি রোজার নিয়ত যদি আরবিতে না করি তাহলে রোজা আমাদের হবে না। হবে না আমাদের রোজার নিয়ত।

আসলে কি তাই! মোটেই নয়। বরং আমরা যে আরবি নিয়তটা জরুরি মনে করি তাতে বড় ধরনের ভুলের ছোয়া রয়েছে। রয়েছে ব্যাকরণগত নানান সমস্যা।
প্রথম কথা হলো, রোজা আরবিতে করা জরুরি নয়।

দ্বিতীয় কথা হলো,আরবি নিয়ত হিসেবে আমাদের মাঝে যে নিয়তটা তথা : নাওয়াইতু আন আসোমা গাদান মিন শাহরী রামাদ্বানাল মুবারাক, ফারদ্বান লাকা ইয়া আল্লাহ! ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলীম।

এই দোয়াটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কোনো দোয়া বা নিয়ত নয়। এর কোনো ভিত্তি নেই। নেই এর কোনো সহিহ সনদ। এটা নিতান্তই মানুষের বানানো। একদল আলেম আছে, যারা রুটি-রুজির জন্য এসব গর্হিত কাজ-কর্ম করে থাকে।

তৃতীয় কথা হলো, আমরা যারা এ নিয়তটি করে থাকি, তারা ঠেরই পাই না যে, তাতে ভুল রয়েছে। রয়েছে বিরাট সমস্যা।

ভুলটি হলো – এখানে রয়েছে ” গাদান”।

রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ ও আরবি ও অর্থসহ ফজিলত

এর অর্থ হলো: আগামীকাল। অথচ দেখা যাচ্ছে আমরা নিয়ত করি চলিত দিন তথা আজকের। আর আজকের আরবি শব্দ হলো ” আল ইয়াওম “। অতএব আমরা আল-ইয়াওম না বলে গাদান বলি । সুতরাং আমাদের সামনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে,তাতে ভুল রয়েছে।

আর তাতে ভুল থাকবেই না বা কেন! তা তো আর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা বা হাদিস নয়। যদি এটা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদিস হতো তাহলে এতে এত্তো বড়ো ভুল থাকতো না। থাকতো না ভুলের সংমিশ্রণ।

সুতরাং এটাও প্রমাণ করে দেয় যে,এটা মানব রচিত একটা প্রচলিত দোয়া। হ্যাঁ! দোয়া নিজ পক্ষ থেকে বানিয়ে বলা যায় বা জায়েজ আছে।

তাই বলে নিজের বানানো দোয়াকে সমাজের মানুষের কাছে জোড়ালো ভাবে প্রচার-প্রচারণার মানে কি দাড়ায়! সেটা একজন বিবেকবান ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারীর কাছে চিন্তার সুযোগ রাখে।

এটা ছাড়াও আমাদের মাঝে আরো নানান গলত মশহুর বিষয়াবলি প্রচলিত আছে। যেগুলোকে আমরা সহিহ মনে করে চালিয়ে দেই।

শুধু কি তাই! না। বরং অনেক ক্ষেত্রে তাগিদ ও দিতে থাকি। এবং তার সাওয়াব ও ফজিলত আম জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকি।

যাতেকরে নিজের রুটি-রুজির ব্যবস্থাটা একটু সুগম হয়। পকেট গরম থাকে।

আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। এবং ইসলামের প্রতিটি হুকুম-আহকামকে সহিহ ভাবে জানা ও বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।

উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে আমরা রোজার গুরুত্ব জানতে পেরেছি