সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয় , মহিলাদের গর্ভধারণ তাদের পিরিওডের চক্রের সাথে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কিত। শারীরিকভাবে সুস্থ প্রত্যেক মহিলার পিরিওডের চক্র ধরা হয় ২৮ থেকে ৩৩ দিন। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী পিরিয়ড শুরু হবার আগের সাত দিন এবং পরের ৭ দিন নিরাপদ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
অর্থাৎ আপনার পিরিওডের তারিখ যদি মাসের ১৫ তম দিন হয় তবে ১৫ তারিখের আগে ৭ দিন এবং পরের সাত দিন নিরাপদ সময়। এই সময়ে আপনি যেভাবেই সহবাস করেন না কেন গর্ভধারণের সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে।
সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়
কিন্তু এই সময়ের বাহিরে যে দিনগুলো রয়েছে সেগুলোকে উর্বর সময় হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ এই অল্প সময়ে যদি বীর্য কোন ভাবে আপনার যোনির ভেতরে প্রবেশ করে তবে নিশ্চিতভাবে আপনি গর্ভবতী হবেন। তবে এই হিসেব শুধু তাদের জন্য যাদের নিয়মিত মাসিক হয়।
সহবাসের পর কতক্ষণ শুয়ে থাকা সব থেকে ভালো
আপনার যদি বাচ্চা নেওয়ার ইচ্ছে থাকে বা উদ্দেশ্য থাকে তাহলে সহবাস করার পর অন্তত আপনাকে আধাঘন্টা শুয়ে থাকতে হবে উচিত । সহবাসের পর আপনি আধাঘন্টা রেস্ট নেওয়ার সময় পায়ের নিচে একটি উঁচু বালিশ দিয়ে শুয়ে থাকুন ।
কারণ এতে করে আপনার বীর্য জরায়ুর ভিতরে ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারবে । এর ফলে আপনি অতি শীঘ্রই গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । আপনাকে একটি জিনিস ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে সেটা হচ্ছে সহবাস করার পর শোয়া থেকে যেন আর উঠে না ।
সাদা স্রাব পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি
প্রতি মাসে মেয়েদের সাদা স্রাবের চার রকমের অবস্থা দেখা যায়।
১) প্রথম অবস্থা হচ্ছে মাসিকের ঠিক পরে যখন কোন সাদাস্রাব দেখা যায় না। মাসিকের রাস্তাটা খুব শুকনা শুকনা মনে হয়, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি (০.৩ শতাংশ)।
২) এর পরের অবস্থায় মাসিকের রাস্তা হাল্কা ভেজা মনে হয়, কিন্তু আপনি চোখে কোন সাদাস্রাব দেখেন না বা হাতেও ধরতে পারেন না, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে ১ শতাংশের একটু বেশি (১.৩ শতাংশ)।
প্রথম এই দুই অবস্থা সবার মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষ করে যাদের মাসিকের সাইকেল ছোট, তাদের ক্ষেত্রে এই দুইটি অবস্থা মাসিকের সময়েই হয়ে যেতে পারে।
তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
৩) তৃতীয় অবস্থায় ঘন সাদাস্রাব যায়। সেটা আঙ্গুলের সাথে আঠালো হয়ে লেগে থাকে। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে ২.৫ শতাংশের কাছে চলে আসে।
৪) চতুর্থ অবস্থায় সাদাস্রাব খুব পাতলা এবং পিচ্ছিল হয়। কাচা ডিমের সাদা অংশ যেমন মসৃণ আর পিচ্ছিল হয়, কিছুটা তেমন। দেখতে স্বচ্ছ। আর সেই সাদাস্রাব দুই আঙ্গুল দিয়ে টেনে বড় করা যায়। কয়েক ইঞ্চি বড় করলেও ভাঙ্গে না। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ২৮.৬ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে আসে।
এই চতুর্থ অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার সাদাস্রাব ঘন আঠালো হয় বা একেবারেই আর কোন সাদাস্রাব যায় না। তবে অনেকের মাসিকের ঠিক আগে আগে আবার পাতলা সাদাস্রাব যেতে পারে, তবে সেটা গর্ভধারণের সাথে সম্পর্কিত নয়।
হোম টেস্ট কিট (Home test kit)
একটি সাধারণ হোম টেস্ট প্রেগন্যান্সি কিট যে-কোনও ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়।
আপনাকে শুধুমাত্র যা-যা করতে হবে তা হল–
একটি কাপে প্রস্রাব সংগ্রহ করুন।
কাপের মধ্যে টেস্টিং স্টিকের ডগাটি রাখুন।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখুন।
একটি পজিটিভ ফলাফলের জন্য আপনি দু’টি লাল রেখা দেখতে পাবেন।
অথবা আপনি একটি লাল রেখা দেখতে পাবেন যার অর্থ নেগেটিভ ফলাফল।
অন্য আর এক ধরনের টেস্টিং কিটে একটি ছোট প্লেট থাকে যেটি আপনি নিজের প্রস্রাবের স্রোতের কাছে ধরে রাখতে পারেন। এটি প্রস্রাবের মিডস্ট্রিম বা মধ্যবর্তী প্রবাহ শোষণ করে নেয় এবং ফলাফল দেখায়। পজিটিভ ফলাফলের জন্য এটি একটি যোগ চিহ্ন এবং একটি নেগেটিভ ফলাফলের জন্য এটি একটি বিয়োগ চিহ্ন দেখাবে।
নেগেটিভ ফলাফল (Negative result)
পরীক্ষাটি যদি নেগেটিভ ফলাফল দেখায়, তাহলে আপনি গর্ভবতী নাও হতে পারেন। কিন্তু আপনি গর্ভবতী হতে পারেন, যদি এমন হয় যে–
টেস্ট কিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
আপনি ভুলভাবে পরীক্ষাটি করেছেন।
আপনি খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষাটি করেছেন।
প্রস্রাব পাতলা হয়ে গেছে কারণ আপনি পরীক্ষাটি করার আগে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ পান করেছেন।
আপনি এমন কোনও ওষুধ খাচ্ছেন যা একটি ভুল ইঙ্গিত দিতে পারে।
যেতে হয় ঠিক সেই সময়টা বেছে নিতে হবে । এতে করে আপনার আধাঘণ্টা একঘন্টা শুয়ে থাকা হয়ে যাবে । বিছানা থেকে উঠে না যাওয়ার কারণে আপনি এই কাজটি করবেন । ঘুমানোর আগ মুহূর্তে সহবাস করা ভালো । তবে বীর্য যত সময় ধরে জরায়ুর ভিতরে প্রবেশ করা যায় ততোই ভালো ।
কিন্তু আরেকটি কাজ আপনার করা খুব জরুরী সেটা হচ্ছে আধাঘণ্টা একঘন্টা পর গোপন অঙ্গ ধুয়ে নেবেন । তবে সহবাস করার পর এক ঘণ্টা আগে গোপন অঙ্গ পরিষ্কার করার দরকার হয় তবে আপনি এখানে একটি কাজ করতে পারেন সেটা হচ্ছে ছোট একটি কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুছে নিতে পারেন ।
ভুলেও একঘন্টা আগে পানি বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন না । এই নিয়মগুলো যদি আপনি মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনি গর্ভধারণ করতে পারবেন । এ নিয়মগুলো হচ্ছে শুধুমাত্র যারা গর্ভবতী হতে ইচ্ছুক শুধু তাদের জন্য ।