সুবহানাল্লাহ অর্থ কি

সুবহানাল্লাহ অর্থ কি , সুবহানাল্লাহ سُبْحَانَ اللهِ বাক্যট আরবি। বাক্যটিতে দুইটি অংশ রয়েছে। একটি সুবহান অন্যটি আল্লাহ। সুবহান অর্থ মহান, পবিত্র। আর আল্লাহ মানে আল্লাহ। সুতরাং সুবহানাল্লাহ এর অর্থ দাড়ায় আল্লাহ মহান, আল্লাহ পবিত্র।


সুবহানাল্লাহ অর্থ কি ?


এটা হল আরবি শব্দ। এই শব্দটি মূলত দুইটি অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে।



প্রথম অংশ হল : সুবহান । আর এর অর্থ হল : পবিত্র
দ্বিতীয় অংশ হল : আল্লাহ। আর এর অর্থ হল : আল্লাহ


এই হিসেবে দুনো অংশ মিলে তৈরি হয়েছে সুবহানাল্লাহ ( سبحان الله ) আর এর অর্থ হল : আল্লাহ পবিত্র।


কখন সুবহানাল্লাহ (Subhanallah) বলতে হয়।


আমরা সুবহানাল্লাহ বলার সঠিক নিয়ম জানি না। ওলট-পালট করে ফেলি। যেমন ধরুন, “আল্লহু আকবার” বলার জায়গায় “সুবহানাল্লাহ” বলি। আবার “মাশাল্লাহ” বলার জায়গায় “সুবহানাল্লাহ” বলি। ইত্যাদি। এজন্য আমাদের কে “সুবহানাল্লাহ” বলার সঠিক নিয়ম জানতে হবে।

 

সুবহানাল্লাহ অর্থ কি



যেমন আপনি নিচের দিকে নামছেন তখন সুবহানাল্লাহ বলবেন।
আল্লাহর মহিমা ও করুণা শুনলে সুবহানাল্লাহ বলবেন।
আল্লাহর সৃষ্ট সুন্দর ফল ও ফুল দেখে সুবহানাল্লাহ বলবেন।


দেখা বৈধ এমন সুন্দর জিনিস দেখে সুবহানাল্লাহ বলবেন।
ভাল কথা শ্রবন করলে সুবহানাল্লাহ ।
আশ্চার্যজনক কোন কথা শুনে সুবহানাল্লাহ বলবেন।
এসব ক্ষেত্রে বলতে হয় সুবহানাল্লাহ অর্থ – আল্লাহ মহান, পূতপবিত্র।



সুবহানাল্লাহ এর ফজিলত


একবার সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত


حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلاَلٍ، حَدَّثَنَا أَبَانٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، أَنَّ زَيْدًا، حَدَّثَهُ أَنَّ أَبَا سَلاَّمٍ حَدَّثَهُ عَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلأُ الْمِيزَانَ ‏.‏ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلآنِ – أَوْ تَمْلأُ – مَا بَيْنَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَالصَّلاَةُ نُورٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا ‏”‏ ‏.



আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ। ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে।

 

‘সলাত’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। ‘সদাকাহ্’ হচ্ছে দলীল। ‘ধৈর্য’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর ‘আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে ‘আমালের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার ‘আমাল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর ‘আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।


সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৪২২


সুবহানাল্লাহ প্রায়শই “আল্লাহর গৌরব হোক” (glory be to Allah) হিসাবে অনুবাদ করা হয়, তবে তা আসলে খুব ভাল অনুবাদ নয়। سبحان শব্দের মূলটি হ’ল سبح, যার অর্থ “পৃষ্ঠদেশে সাঁতার কাটা”। সুতরাং সুবহান বলতে বোঝায়— লোকেরা আল্লাহ সম্পর্কে যে ভুল বক্তব্য দেয়, আল্লাহ তার উর্দ্ধে।



সুতরাং আরও ভাল অনুবাদ হবে— “আল্লাহ তায়ালার যে কোনও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত”। কুরআনে এই প্রসঙ্গেই ব্যবহৃত হয়েছে । এখানে কুরআনে সুবহানাল্লাহ শব্দটি প্রকাশিত হয়েছে তার একটি তালিকা রয়েছে: سبحان الله – Qur’an Search – The Noble Qur’an



আপনি দেখতে পাবেন যে যখন কেউ আল্লাহ সম্পর্কে কোনও অভিযোগ করেছে (যেমন, তাঁর পুত্র বা অংশীদার রয়েছে) তখন এটি প্রায়শই ব্যবহৃত হয়েছে।



সুতরাং, যখন কেউ সুবহানাল্লাহ বলে, তখন ভাবতে হবে যে আল্লাহ কতটা নিখুঁত; বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে, আল্লাহ যে কোন অসম্পূর্ণতা থেকে মুক্ত।



সুবহানাল্লাহ এর ফজিলত


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ১০০ বার সুবহানাল্লাহ বলবে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা তার এক হাজার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ( মুসলিম শরীফ এবং মেশকাত শরীফ )
রসুলুল্লাহ সাঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে বলেন যত বার তুমি সুবহানাল্লাহ বলবে ততটি গাছ জান্নাতে তোমার জন্য রোপণ করা হবে।

 


সুবহানাল্লাহ’র তাৎপর্য কি ?
এই বাক্যটির অনেক তাৎপর্য রয়েছে।

আল্লাহ তাআলার কাছে সুবহানাল্লাহ জিকির অনেক প্রিয়। আর এ বাক্য দ্বারা তিনি অনেক খুশি হন। আল্লাহ তাআলা সুবহানাল্লাহ বাক্যটি নিজের জন্য পছন্দ করেছেন।

 


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন : সুবহানাল্লাহ এর অর্থ হল : আল্লাহ তাআলা পবিত্র। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মন্দ ও সকল ধরনের দোষ ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত বা পবিত্র।
এই বাক্যটি তারা আল্লাহতালার বড়ত্ব এবং পবিত্রতার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।




সুবহানাল্লাহ শব্দের শাব্দিক বিশ্লেষ কি ?


সুবহান শব্দটি মূলত সাবাহুন ( سبح) থেকে এসেছে। আর এর অর্থ হল : মহিমান্বিত করা।

এই হিসেবে ( سبحان الله ) শব্দের পরিপূর্ণ অর্থ হল : আমি আল্লাহকে সকল প্রকার মিথ্যা, দোষ ত্রুটি ও মন্দ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।

 



এই অর্থের দলিল হলো : আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন : سبحان الله عما يصفون (সুবহানাল্লাহি আম্মা ইয়াসিফুন। অর্থাৎ তারা যা বর্ণনা করে তার থেকে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র।



“সুবহানাল্লাহ” এর অর্থ কী এবং কখন বলতে হয়ঃ
‘সুবহানাল্লাহ’ এর অর্থ হচ্ছে- সকল
পবিত্রতা আল্লাহর ।
১) আল্লাহর মহিমা শুনে,
২)সুন্দর ফল ও ফুল দেখে,
৩) দৃষ্টিপাত বৈধ এমন সুন্দর জিনিস দেখে,
৪) ভাল কথা শ্রবন করে,


৫) আশ্চার্যজনক কোন কথা শুনে,
ইত্যাদি ক্ষেত্রে বলতে হয় ‘সুবহানাল্লাহ’

 


বার সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত


হাদিস নং ১
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ عَلِيٍّ، أَنَّ فَاطِمَةَ ـ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ ـ شَكَتْ مَا تَلْقَى فِي يَدِهَا مِنَ الرَّحَى، فَأَتَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم تَسْأَلُهُ خَادِمًا، فَلَمْ تَجِدْهُ، فَذَكَرَتْ ذَلِكَ لِعَائِشَةَ، فَلَمَّا جَاءَ أَخْبَرَتْهُ‏.‏ قَالَ فَجَاءَنَا وَقَدْ أَخَذْنَا مَضَاجِعَنَا، فَذَهَبْتُ أَقُومُ فَقَالَ ‏”‏ مَكَانَكِ ‏”‏‏.‏ فَجَلَسَ بَيْنَنَا حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَ قَدَمَيْهِ عَلَى صَدْرِي فَقَالَ ‏”‏ أَلاَ أَدُلُّكُمَا عَلَى مَا هُوَ خَيْرٌ لَكُمَا مِنْ خَادِمٍ، إِذَا أَوَيْتُمَا إِلَى فِرَاشِكُمَا، أَوْ أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا، فَكَبِّرَا ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ، وَسَبِّحَا ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ، وَاحْمَدَا ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ، فَهَذَا خَيْرٌ لَكُمَا مِنْ خَادِمٍ ‏”‏‏.‏ وَعَنْ شُعْبَةَ عَنْ خَالِدٍ عَنِ ابْنِ سِيرِينَ قَالَ التَّسْبِيحُ أَرْبَعٌ وَثَلاَثُونَ‏.‏

 



আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একবার গম পেষার যাঁতা ঘুরানোর কারণে ফাতেমাহ (রাঃ) এর হাতে ফোস্কা পড়ে গেল। তখন তিনি একটি খাদিম চেয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে এলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে পেলেন না। তখন তিনি আসার উদ্দেশ্যটি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -এর নিকট ব্যক্ত করে গেলেন।

 

এরপর তিনি যখন গৃহে ফিরলেন তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ) এ বিষয়টি তাঁকে জানালেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে এমন সময় আগমন করলেন যখন আমরা বিশ্রাম গ্রহণ করেছি। তখন আমি উঠতে চাইলে তিনি বললেনঃ নিজ স্থানেই অবস্থান কর।



তারপর আমাদের মাঝখানেই তিনি এমনিভাবে বসে গেলেন যে, আমি তার দু’পায়ের শীতল স্পর্শ আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের এমন একটি ‘আমাল বলে দেব না, যা তোমাদের জন্য একটি খাদিমের চেয়েও অনেক অধিক উত্তম। যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করতে যাবে, তখন তোমারা আল্লাহু আকবর ৩৩ বার, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আল্‌হামদু লিল্লাহ ৩৩ বার পড়বে। এটা তোমাদের জন্য একটি খাদিমের চেয়েও অনেক অধিক কল্যাণকর। ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেনঃ তাসবীহ হলো ৩৪ বার।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ৬৩১৮





১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহির ফজিলত।
যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়ে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্াতে একটি খেজুর গাছ তৈরি করেন। যেমন হাদিসে এসেছে –

 



সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি পড়লে সৃষ্টিকুলের সমস্ত মানুষ থেকে বেশী মর্যাদা দেওয়া হবে। সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৯১।



আশা করি আপনারা সুবহানাল্লাহ এর অর্থ জানতে পেরেছেন। সুবহানাল্লাহ অর্থ আল্লাহ মহান, পূতপবিত্র। সুবহানাল্লাহ এর অনেক ফজিলত রয়েছে উপরের আলোচনা থেকে সেটাও জানতে পারছেন। আসুন আমরা সুবহানাল্লাহ পাঠ করে অশেষ নেকি হাসিল করি।


(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)