হাদিসে কুদসি কাকে বলে , হাদীসে কুদসীর অভিধানিক অর্থ : হাদীসের অর্থ আমরা ইতঃমধ্যেই জেনেছি। আর কুদসী হলো কুদস এর সম্বন্ধ-বিশেষণ। এ সম্বন্ধ-বিশেষন তাযীম ও সম্মানের অর্থবহ। অতএব হাদীসে-কুদসীর আভিধানিক অর্থ হলো সম্মানিত হাদীস।
হাদিসে কুদসি কাকে বলে
হাদীসে কুদসীর পারিভাষিক সংজ্ঞা : পরিভাষায় এমন হাদীসকে হাদীসে কুদসী বলে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দিকে নিসবত করে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ তিনি তা আল্লাহর কথা হিসেবে বর্ণনা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কেবল আল্লাহর কথাকে নিজের ভাষায় বর্ণনা করেন।
যখন পরবর্তীতে কেউ এ ধরনের হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে, তখন সে বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার রব থেকে যা বর্ণনা করেছেন তাতে বলেন- অথবা বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন বা অথবা আল্লাহ তাআলা বলেন, এভাবে উল্লেখ থাকে।
হাদিসে কুদসিকে হাদিসে ইলাহি ও হাদিসে রব্বানিও বলা হয়। মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় এসব হাদিসকে কুদসি এবং বর্ণনা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ হওয়ায় তাকে হাদিস বলা হয়। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদিসে কুদসি ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে’ বলে বিশ্বাস করা আবশ্যক মনে করে।
(উলুমুল হাদিস ওয়া নুসুসুম-মিনাল আসার, পৃষ্ঠা-১৩৭)
হাদিসে কুদসির শব্দ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ আর তার অর্থ ও মর্ম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। (তাইসিরু মুসতালাহুল হাদিস, পৃষ্ঠা-১২৮)
কোরআন ও হাদিসে কুদসির পার্থক্য : পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কুদসি উভয়ই আল্লাহর বাণী হলেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো—
১. কোরআনের শব্দ ও মর্ম উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর হাদিসে কুদসির শুধু মর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে।
২. সম্পূর্ণ কোরআন সন্দেহাতীত সনদে ধারাবাহিক সূত্রে বর্ণিত, কিন্তু হাদিসে কুদসি এমন নয়।
কোরআন আল্লাহ কর্তৃক শতভাগ সংরক্ষিত। হাদিসে কুদসিও সংরক্ষিত, তবে কোরআনের মতো নয়।
৪. নামাজে কোরআন তিলাওয়াত আবশ্যক। অন্যদিকে নামাজে কিরাতের পরিবর্তে হাদিসে কুদসি তিলাওয়াত করা বৈধ নয়।
৫. কোরআন মহানবী (সা.)-এর জন্য মুজিজা (অলৌকিক), কিন্তু হাদিসে কুদসি মুজিজা নয়। (সহিহ হাদিসে কুদসি, পৃষ্ঠা ১-২)
আল্লাহ বলবেন, “তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে?”
(আল্লাহ আরো বলবেন) “হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি।”
বান্দা বলবে, “হে আমার পালনকর্তা! আমি কিভাবে আপনাকে পানি পান করাবো, আপনি তো হচ্ছেন সমগ্র জগতের পালনকর্তা?’
তখন আল্লাহ বলবেন, “আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমাকে কাছে পেতে?”
(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)