৬ দফা গুলো কি কি,অভিজ্ঞতাদের পরামর্শ অনুযায়ী

৬ দফা গুলো কি কি , ছয় দফা আন্দোলন : পাকিস্তানের শোষণ ও অন্যায় থেকে মুক্তি লাভের জন্য ১৯৬৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয়টি কর্মসূচি সম্বলিত একটি প্রস্তাব পেশ করেন, যা ইতিহাসে ছয় দফা আন্দোলন নামে পরিচিত।



ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তি সনদ। ছয় দফার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক পটভূমি বিশ্লেষণ করলে বুঝায়, ছয় দফা দাবি বাঙালিদের প্রাণের দাবি। পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বাংলা নামক রাষ্ট্র গঠনের জন্য ছয় দফা দাবি লাহোরে উপস্থাপন করা হয়।



এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা লাভ করে। ছয় দফা পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকস্বরূপ। এই দাবির প্রেক্ষিতে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে।

 

৬ দফা গুলো কি কি



ছয় দফা আন্দোলন ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফা আন্দোলনে সমগ্র বাঙালি জাতি সাড়া দেন। বাঙালিরা তাদের অধিকার আদায়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলে।



পাকিস্তানের শাসকেরা বাঙালির আন্দোলনে ভীত হয়ে পড়েন। পাকিস্তানি শাসকেরা আওয়ামী লীগ নেতাদের মিথ্যা মামলা দেন। পরবর্তীকালে আন্দোলনে ছয় দফা দাবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ফেলে ।

 



১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিসমূহ



ছয় দফা দাবি পেশের পর তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সাথে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান লাহোর থেকে ফিরছেন।


প্রস্তাব – ১ : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি:
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে;
প্রস্তাব – ২ : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা:

কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।
প্রস্তাব – ৩ : মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু’টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারেঃ-
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।
অথবা


(খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।


প্রস্তাব – ৪ : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:
ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।


প্রস্তাব – ৫ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা:
(ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
(খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে।
(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।

 


(ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।
(ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।


প্রস্তাব – ৬ : আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা:
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে

(সূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট)