তাহাজ্জুদ হল একটি আরবি শব্দ, শব্দটি পবিত্র কোরআনে রয়েছে , তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এই শব্দটির ‘নিদ্রা যাও’ এবং ‘জাগ্রত হওয়া’ এই দুই পরস্পরবিরোধী অর্থে ব্যবহৃত হয়
সূরা বনী ইসরাইলে ৭৯ নম্বর আয়াতে শব্দটির অর্থ রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ আগ্রহ থাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
আয়াতটিতে উল্লেখিত ‘বিহী’ শব্দটি দ্বারা পবিত্র কুরআনকে বোঝানো হয়েছে, কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকার মানেই হলো নামাজ পড়া, আর এ কারণেই শরীয়াতে রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়, মূলত কিছু সময় নিদ্রা যাওয়ার পর যে সালাত আদায় করা হয় তাই তাহাজ্জুতের নামাজ। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ গুরুত্ব অনেক ।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘ফরজ নামাজের পর নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল তাহাজ্জুদের সালাত তথা রাতের নামাজ’ ( মুসলিম, তিরমিজি ও নাসায়ী) এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষভাবে রাত্রিবেলা তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে চাদর আবৃত রাতের সাথে দাড়াও কিছু অংশ ছাড়া (সূরা মুযযাম্মিল আয়াত নাম্বার ১-২)
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, ইসলামের প্রাথমিক যুগে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার পূর্বেই, সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি, কিছু সময়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ ছিল না।কিন্ত এই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণের গুরুত্ব অনেক ।
যারা সম্পূর্ণ বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন তাদের মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ হলেন তাঁরা, যারা যত্নের সহিত রাত্রিবেলা তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সালাতের প্রতি বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, তাই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর, সাহাবীগণ তাবেঈন তাবে-তাবেঈন সহ সকল যুগের অলি-আওলিয়া ও দ্বীনী ব্যক্তিরা তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের মাধ্যমে রাত্রি কাটিয়ে দিয়েছেন।তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ
কুরআন মাজিদে তাহাজ্জুদ সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের কঠিন গুনা মাফ করে দেওয়ার জন্য প্রতি রাতেই আসমানের নিকটবর্তী হয়ে চলে আসেন এবং তিনি বলতে থাকেন, কে আছো আমায় ডাকো, আমি তার ডাকে সাড়া দিব এভাবে তিনি রাতের শেষ অংশে তার বান্দাদের ডাকতে থাকেন এজন্য তাহাজ্জোতের গুরুত্ব অপরিসীম।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ ,মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলেন, রাত্রের কিছু অংশে তাহাজ্জুতের নামাজ কায়েম করো, এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য, আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমার সৃষ্টিকর্তা তোমাকে প্রতিষ্ঠা করবেন প্রশংসিত স্থানে ( সূরা বনী ইসরাঈল ৬৯ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,
অর্থাৎ ,মহান আল্লাহ বলেন, তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্খা ও আশঙ্কার সাথে, তাদের প্রতিপালকের ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি তা হতে তারা দান করে (সূরা সেজদা ১৬ নম্বর আয়াত)
আরও বলেছেন,
অর্থাৎ ,মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আরো এক আয়াতে বলেন, তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত (সূরা যারিয়াত আয়াত নম্বর ১৭
আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয় (সূরা আল ফুরকান আয়াত নম্বর ৬৪)
তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল অটল-অবিচল অনুসারী অনুগত আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুল ত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী (সূরা আল ইমরান আয়াত নম্বর ১৭
হাদিসে তাহাজ্জুতের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলতহযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুতের নামাজ। এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
হাদিস
হযরত সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার কতইনা ভাল মানুষ হতো, সে যদি রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তো, তারপর থেকে আমার আব্বা আব্দুল্লাহ রাতে অল্পক্ষনেই ঘুমাতেন (সহীহুল বুখারী ৪৪০ তিরমিজি, মুসলিম) এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
হাদিস
হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একসাথে নামাজ পড়তাম, তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন আমি মনে মনে বললাম একশত আয়াতের মাথায় রুকু করবেন, কিন্তু তিনি তারপরও কিরাত চালু রাখলেন, আমি মনে মনে বললাম তিনি এরই দ্বারা সূরা শেষ করে রুকু করবেন, তিনি সূরা নিসা পড়তে আরম্ভ করলেন এবং সম্পূর্ণ পড়লেন তারপর তিনি সূরা আলে ইমরান আরম্ভ করলেন এবং সম্পন্ন করলেন, তিনি স্পষ্ট, ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন, যখন মোনাজাতের তাসবিহ পাঠ করার উল্লেখ আছে তখন আল্লাহ তাসবিহ পাঠ করতেন যখন কোন প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত অতিক্রম করতেন তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন যখন কোন আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত অতিক্রম করতেন তখন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু করলেন,
সুতরাং তিনি রুকুতে সুবহানা রব্বিয়াল আযীম বলে আরম্ভ করলেন আর তার রুচি ও কিয়াম দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থায় এক সমান ছিল, তারপর তিনি রুকু থেকে মাথা তুলে সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা রব্বানা লাকাল হামদ অর্থাৎ আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রশংসা করলেন যে তার জন্য বলল হে আমাদের পালনকর্তা তোমার সমস্ত প্রশংসা অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন রুকুর কাছাকাছি তারপর সেজদা করলেন এবং তাতে তিনি পড়লেন সুবহানা রব্বিয়াল আলা অর্থাৎ আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি আর তার সেজদা দীর্ঘ ছিল তার কিয়াম দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থার কাছাকাছি। (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ৭৭২, ২৬২,১০০৮) এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ
তাহাজ্জত নামাজের সময়
তাহাজ্জুদের সালাত রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম, তাহাজ্জুদের সময় মূলত রাত্রে ২ টা থেকে শুরু করে ফজরের আযানের প্রায় পূর্ব পর্যন্ত থাকে, তবে ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারার সম্ভাবনা না থাকলে এশার নামাজের পরে দুই রাকাত সুন্নাত ও বিতেরের নামাজের আগে পড়ে নেওয়া জায়েজ আছে, তবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা সর্বোত্তম।
তাহাজ্জত নামাজের ওয়াক্ত
এশার সালাত আদায়ের পর থেকে সুবেহ সাদিকের পূর্ব সময় পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা যায়, পবিত্র কোরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের যে তাগিত দেওয়া হয়েছে, তার সঠিক মর্ম এই যে রাত্রের কিছু অংশে ঘুমিয়ে তারপর ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করা, তাদের সর্বোত্তম সময় হল এশার নামাজের আদায়ের পর লোকেরা ঘুমাবে এরপর অর্ধেক রাতের পর, ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করবে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কখনো মধ্যরাতে, কখনো বা তার কিছু পূর্বে, অথবা পরে , ঘুম থেকে উঠতেন এবং তারপর আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আল ইমরানের শেষ রুকু আয়াত পাঠ করতেন, তারপর মিসওয়াক অজু করে সালাত আদায় করতেন।এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
তাহাজ্জত নামাজের নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতুয়ান উসালিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাআতাই সালাতিত তাহাজ্জতিই মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবর।
বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ আপনার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবার
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দুই রাকাত করে সালাত আদায় করতেন, যে কোন সূরা দিয়ে এই সালাত আদায় করা যায়, তবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বা কেরাতে সালাত আদায় করতেন।এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
প্রথমেই তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধা
এরপর সানা পড়া
সুরা ফাতেহা পড়া
সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো
এরপর অন্যান্য নামাজের মতই রুকু সিজদা আদায় করা , একইভাবে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করে তারপর তাশাহুদ, দুরুদ ও সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা
তাহাজ্জুতের নামাজের রাকাত সংখ্যা
আবু সালা-মা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমজানে নবীজির সালাত কেমন হতো? উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে এবং রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করো না, এরপর তিনি আরও চার রাকাত পড়তেন, তার সৌন্দর্য দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করো না এরপর তিনি তিন রাকাত বিতর পড়তেন ( বুখারী শরীফ ১/১৫৪, হাদিস নাম্বারঃ ১১৪৭, সহিঃ মুসলিম ১/২৫৪, হাদিস নাম্বারঃ ৭৩৮ ) এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ
তাহাজ্জত নামাজের দোয়া
তাহাজত নামাজ এ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল দোয়া পড়তেন
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, গভীর রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে উঠে পবিত্র কোরআনের আয়াত সহ সূরা আল ইমরানের শেষ আয়াত তিলাওয়াত করতেন,( বুখারী মুসলিম মিশকাত) এতঃএব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ এর গুরুত্ব অনেক ।
তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত….
পবিত্র কোরআনের সূরা আল মুজাম্মিল বলা হয়েছে, অবশ্যই রাতে নিদ্রা থেকে ওঠা মনোনীত করার জন্য অধিক কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির একেবারে যথার্থ।
সূরা আল ফুরকান এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত্রি অতিবাহিত করে।
তারা ছিল শক্তিশালী পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল অনুসারী এবং পরম অনুগত, আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গ কারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ( সূরা আল ইমরান আয়াত নাম্বার ১৭)
F
ফরয সালাতের পরে অন্যান্য সকল সুন্নাত, নফল, সালাত এরমধ্যে তাহাজ্জুদের সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সবচেয়ে বেশি।( আহমদ মিশকাত ১১০পৃষ্ঠা)
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ম দোয়া ও বাংলা উচ্চারণ
হাদিস
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আমাদের প্রভূ পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়াতা’য়ালা, প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রির আর এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, অতঃপর তিনি বলেন তোমাদের মধ্যে কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো, আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেবো, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব । (মুসলিম, মিশকাত ১০৯পৃষ্ঠা)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাতের প্রথম দিন এবং রাতের শেষের দিকে উঠে তিনি নামাজ আদায় করতেন (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১১ রাকাত করে নামাজ পড়তেন রাতে, তিনি মাথা তোলার পূর্বে এত দীর্ঘ সেজদা করতেন যে তাদের কেউ ৫০ আয়াত পড়তে পারবে আর ফরয নামাযের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে ডান পাশে শুয়ে আরাম করতেন শেষ পর্যন্ত তার নিকট নামাজের ঘোষণাকারী এসে হাজির হতো
(সহীহ বুখারী ৬২৬)
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন কোন কোন মাসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে রোজা ত্যাগ করতেন যে, উক্ত মাসে আর কোন রোজাই তিনি রাখবেন না, ঠিক তেমনিভাবে কোন কোন মাসে তিনি এমনভাবে রোজা রাখতেন যে মনে হতো এই মাসে আর কোন রোজাই বাদ দিবেন না, হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর অবস্থা এমন হতো যে, যদি তুমি তাকে রাত্রিতে নামাজ পড়া অবস্থায় দেখতে না চাইতে তবুও বাস্তবে নামাজ পড়া অবস্থায় দেখতে পেতে আর তুমি যদি চাইতে যে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখবে না, কিন্তু বাস্তবে তুমি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেতে (সহীহুল বুখারী ১১৪১)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন হে আমার উম্মতগণ তোমরা ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার করো ক্ষুধার্তকে অন্য দাও এবং লোকে যখন রাতে ঘুমিয়ে পড়বে তখন যেন তোমরা নামাজ পড়ো (তিরমিজি ২৪৮৫)
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন যখন কেউ নির্দেশ দেয় তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়, প্রত্যেক গাটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে তোমাদের সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত অতঃপর তুমি ঘুমাও, তারপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে তাহলে প্রথম গাট খুলে যায় এবং সে যখন উঁজু করে তখন দ্বিতীয় গাট খুলে যায় এবং সে যখন নামাজ আদায় করে তখন তৃতীয় গাট খুলে যায়, তার প্রভাত হয় ভালো মনে, নচেৎ সে সকালে উঠে কলুষিত মনে অলসতা নিয়ে। (সহীহুল বুখারী ১১৪২)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন হে আব্দুল্লাহ, তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না যে রাতে উঠে নামাজ পড়তো তারপর রাতে উঠা ছেড়ে দিল।
(সহীহুল বুখারী১১৩১)
হযরত সাঈদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতইনা ভাল মানুষ যদি সে রাতে তাহাজ্জত নামাজ পড়তেন, তারপর থেকে আমার আব্বা আব্দুল্লাহ অল্পক্ষন ঘুমাতেন
(সহীহুল বুখারী৪৪০)
রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রাতে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের সালাত পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে সালাত পড়ার, এমনকি সে যদি জেগে না ওঠে তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয়, তাহলে তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে থাকেন, অনুরূপ কোন মহিলা যদি রাত্রি কালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদের সালাত পড়ে এবং সে তার স্বামীকে সালাতের জন্য জাগায়, এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার নিদ্রা ভাঙ্গিয়ে দেয়, তাহলে তার প্রতি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে ।
(আবু দাউদ নাসাঈ মেশকাত)
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, মহান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় সালাত দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ, তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতে এবং রাতের তৃতীয় ভাগে সালাতে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন।
( বুখারী মুসলিম মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা তার বান্দার জন্য এটা নিয়ামত স্বরূপ পাঠিয়েছেন
এটা শেষ রাতের নামায যখন তোমার আশপাশের সব কিছু নীরব এই নিরব এর ভিতরেই তোমার সৃষ্টিকর্তা কে ডাকলে সৃষ্টিকর্তা তোমার ডাকে সাড়া দিবেই, কোন বিপদ থেকে রোগবালাই থেকে এবং নিজের মনের ইচ্ছাকে পূরণ করতে এই নামাজি হল সর্বোত্তম নামাজ
এই নামাজের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে মনের দুঃখের কথা বলে পর
কিয়ামতের ভয়াবহ বিপর্যয় ও কঠিন হিসাব নিকাশের সময় কোন ব্যক্তি যদি সহজ হিসাব কামনা করে, তবে তার উচিত হবে নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত পড়া , শ্রেষ্ঠতম মুফাসসিরে কোরআন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব কামনা করে তার উচিত হবে মহান আল্লাহ যেন তাকে রাত্রির অন্ধকারে সেজদারত ও দাড়ানো অবস্থায় পান, তার মধ্যে পরকালের চিন্তা ও রহমতের প্রত্যাশাও থাকা দরকার। ( তাফসীরে কুরতুবী, মাআরেফুল কোরআন, কিয়ামুল লাইল)
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুক, আমিন।