হাদীস শব্দের অর্থ কি

হাদীস শব্দের অর্থ কি ,  কোরআনে এই শব্দটি কতবার এসেছে ? এবং প্রতিবারই কি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ? হাদিস শব্দের আভিধানিক অর্থ : প্রসিদ্ধ আরবী অভিধান লিসানুল আরব , সিহাহ , কামুস এর মধ্যে হাদিস শব্দটি : পুরাতন এর বিপরীত অর্থাৎ “নতুন” অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে ।



“‏ذي”‏‏ ইঙ্গিত বাহক বিশেষ্য বা ইসমে ইশারাহ। এর মাধ্যমে তিনি মানযুমায় বর্ণিত হাদিসের প্রকারগুলোর দিকে ইশারা করেছেন। হাদিসের প্রকার দ্বারা মৌলিক ও আনুষঙ্গিক উভয় উদ্দেশ্য। হাদিসের মৌলিক প্রকার তিনটি: সহি, হাসান ও দ্বা‘ঈফ।[1] লেখক প্রথম ছয়টি পঙক্তিতে মৌলিক প্রকার ও অবশিষ্ট পঙক্তিতে আনুষঙ্গিক প্রকারসমূহ উল্লেখ করেছেন।



পারিভাষিক সংজ্ঞা : রাসূল (সা:)- এর বাণী কর্ম , মৌন অনুমোদন এবং তার চারিত্রিক ও শারীরিক গুণাবলীর নাম হাদিস । তদ্রুপ – সাহাবায়ে কিরাম , তাবেয়ীনদের বানী কর্ম ও মৌন অনুমোদনকেও হাদিস বলে ।

 


পবিত্র কোরআনে হাদিস শব্দটি ২৬ বার এসেছে এবং বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে :

 


যেমন :
১। হাদিস শব্দ “কোরআন” এর অর্থ হিসেবে:
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ
আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। ( সুরাহ যুমার : ২৩ )



حديث এর আভিধানিক অর্থ নতুন। আল্লাহর কালাম ‘কাদিম’ বা অনাদির বিপরীত নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীকে হাদিস বলা হয়, কারণ তার বাণী অপেক্ষাকৃত নতুন। সংবাদকে হাদিস বলা হয়, কারণ সংবাদ অপেক্ষাকৃত নতুন। মুখের কথাও হাদিস, কারণ এগুলো নতুন নতুন অস্তিত্ব লাভ করে। এ হিসেবে কুরআনুল কারিমকে হাদিস বলা হয়। ইরশাদ হচ্ছে:



﴿ فَبِأَيِّ حَدِيثِۢ بَعۡدَ ٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ يُؤۡمِنُونَ ٦ ﴾ [الجاثية : ٦]


“অতএব তারা আল্লাহ ও তার আয়াতের পর আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে”?[2]




২। কোরআন করীমে হাদিস শব্দটির আরও একটি দৃষ্টান্ত:

فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا

 


যদি তারা এই বিষয়বস্তুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তাদের পশ্চাতে সম্ভবতঃ আপনি পরিতাপ করতে করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।
( সুরাহ কাহফ : ৬ )

 

হাদীস শব্দের অর্থ কি



হাদিসের মৌলিক প্রকার দু’টি ‘সহি’ ও ‘দা‘ঈফ’। তাদের নিকট ‘হাসান’ও ‘সহি’ হাদিসের প্রকার। দলিল: হাদিসে গ্রহণযোগ্যতার দলিল থাকবে, বা থাকবে না, থাকলে ‘সহি’, নচেৎ ‘হাসান’। তিন প্রকারের দলিল: হাদিসে গ্রহণযোগ্যতার দলিল থাকবে, বা থাকবে না, না থাকলে ‘দা‘ঈফ’, আর থাকলে পূর্ণমাত্রায় থাকবে, বা দুর্বলভাবে থাকবে, পূর্ণমাত্রায় থাকলে ‘সহি’, দুর্বলভাবে থাকলে ‘হাসান’।




৩। হাদিস শব্দটি “ঘটনা” বুঝানোর জন্য :

وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ مُوسَى


আপনার কাছে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি।
( সুরাহ ত্বয়া-হা : ৯ )


‘উসুলে হাদিসের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ’-এ আমরা জেনেছি হাদিস শাস্ত্রের দু’টি অংশ: ‘ইলমুর রিওয়াইয়াহ’ ও ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’। সাধারণত ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’-কে উসুলে হাদিস বলা হয়। এখানে হাদিসের প্রকার দ্বারা ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’-র প্রকারসমূহ উদ্দেশ্য।

 


عدَّة দ্বারা উদ্দেশ্য ‘ইলমুদ দিরায়াহ’র কতক প্রকার, কারণ তিনি সকল প্রকার বর্ণনা করেননি, মাত্র ৩২-টি প্রকার সংজ্ঞাসহ বর্ণনা করেছেন, যা মৌলিক ও অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ।

 


حدّ বলা হয় কোনো বস্তুর এমন সংজ্ঞাকে, যার থেকে তার কোনো প্রকার বাদ পড়ে না, আবার অপর বস্তুর কোনো প্রকার তাতে প্রবেশ করে না।




৪। হাদিস শব্দটি “দৃষ্টান্ত” বুঝানোর জন্য :


فَقَالُوا رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ أَسْفَارِنَا وَظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ فَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ وَمَزَّقْنَاهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ

 


অতঃপর তারা বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের ভ্রমণের পরিসর বাড়িয়ে দাও। তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। ফলে আমি তাদেরকে উপাখ্যানে পরিণত করলাম এবং সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
(সুরাহ সাবা ১৯ )

 



“জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, কোন সদকা মহান? তিনি বললেন: «أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ …» ‘তোমার সদকা করা যে, তুমি সুস্থাবস্থায় ও সম্পদ আকাঙ্খী …। বুখারি: (১৪১৯), মুসলিম: (১০৩৪)


 


৫। হাদিস শব্দটি “স্বপ্ন” বুঝানোর জন্য :

وَكَذَلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأْوِيلِ الأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَى آلِ يَعْقُوبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَى أَبَوَيْكَ مِن قَبْلُ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَقَ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

 



এমনিভাবে তোমার পালনকর্তা তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে বাণীসমূহের নিগুঢ় তত্ত্ব শিক্ষা দেবেন এবং পূর্ণ করবেন স্বীয় অনুগ্রহ তোমার প্রতি ও ইয়াকুব পরিবার-পরিজনের প্রতি; যেমন ইতিপূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছেন। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা অত্যন্ত জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

(সূরা ইউসুফ : ৬ )

 





সনদ, মুত্তাসিল, সায, মুয়াল, রাবি, আদেল বা আদালত ও দাবত বা দাবেত ইত্যাগি শব্দগুলো আরবি পরিভাষার বাংলা উচ্চারণ। শায ও মু‘আল্‌ ব্যতীত সবক’টি পরিভাষার ব্যাখ্যা ‘সহি’র অধীনে সামনে আসছে। শায-এর জন্য ২১-নং পঙক্তি এবং মু‘আলের জন্য ২৪-নং পঙক্তির ব্যাখ্যা দেখুন।

 




৬। হাদিস শব্দটি “কথা” বুঝানোর জন্য :



وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ
যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন,
( সুরাহ তাহরীম : ৩ )

 


হাদীস কত প্রকার ও কি কি

 


বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে হাদিস সাধারণত ০৩ প্রকার। যথা, কাওলী হাদীস, ফিলী হাদীস ও তাকরীরী হাদীস।



০১.কাওলী হাদীসঃ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সালাহ সালামের মুখের পবিত্র বাণী বা কথাগুলোকে কাওলী হাদীস বলে।

 


০২. ফিলী হাদীসঃ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সালাহ সালাম যে কাজ গুলো স্বয়ং নিজে করেছেন এবং সাহাবীগণ তা বর্ণনা করেছেন তাই ফিলী হাদীস।

 


০৩. তাকরীরী হাদীসঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম সাহাবীদের যে সব কথাও কাজের প্রতি সমর্থন প্রদান করেছেন তাকে তাকরীরী হাদীস বলে।






৭। হাদিস শব্দটি “বর্ননা” বুঝানোর অর্থে :

وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ

 


এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।
(সুরাহ আদ দ্বোহা : ১১ )

উপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহে “হাদিস” শব্দটি কথা এবং বর্ননা করার অর্থে এসেছে । সুতরাং ইহা থেকে রসুলুল্লাহ (সা:) এর কথা , বর্ণনা ইত্যাদিকেও হাদিস বলা হয় ।



হাফিজ সাখাভি (রাঃ) বলেন, যা রাসূল সা. এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত; চাই তার উক্তি হোক বা কর্ম বা অনুমোদন অথবা গুণ, এমনকি ঘুমন্ত অবস্থায় ও জাগ্রত অবস্থায় তার গতি ও স্থিতিকে হাদিস বলা হয়।